ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম না পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। ফলে দলীয়ভাবে সার্চ কমিটিতে নাম না পাঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তী সময়ে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শরিকরা নিজ নিজ দল অনুযায়ী নাম পাঠানোর কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে।
রোববার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় নাম না পাঠানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে দলের অধিকাংশ সদস্য বলেছেন, সরকারি দল নামের তালিকা পাঠালে সেখান থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দল ইস্যু করার সুযোগ পাবে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল জোটগতভাবে নাম পাঠানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
বৈঠক শেষে চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদও বলেছেন, ১৪ দলের সঙ্গে আলোচনা করে নাম পাঠানো হবে।
বিকেলে ৩টায় সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারি দলের সভাকক্ষে সংসদীয় দলের প্রধান শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে রাতে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, নাম পাঠানো, না পাঠানোর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে সোমবার। সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করবে।
সংসদীয় দলের বৈঠক বিষয়ে সূত্র আরো জানায়, বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন ও ওই কমিটির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সার্চ কমিটি গঠনের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। সিনিয়র সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, তোফায়েল আহমেদ, সুবিদ আলী ভুঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন সার্চ কমিটি গঠনের বিপক্ষে মতামত প্রদান করেন। তারা সার্চ কমিটির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সম্ভাব্য কমিশনারদের নামের তালিকা পাঠানোরও বিপক্ষে মত দেন।
নাম না পাঠানোর পক্ষে মত দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। বিষয়টি রাষ্ট্রপতি ও সার্চ কমিটির কাছেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।’
তবে মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল মান্নানসহ কয়েকজন সার্চ কমিটির কাছে নামের তালিকা পাঠানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। পরে অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির কাছে দলের পক্ষ থেকে নামের তালিকা না পাঠিয়ে ১৪ দলের পক্ষ থেকে নাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সার্চ কমিটির কাছে নামের তালিকা পাঠানোর ব্যাপারে ১৪ দলের সঙ্গে বসব। সকলের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা ১৪ দলের পক্ষ থেকে সার্চ কমিটির কাছে তালিকা পাঠাব।’
সন্ধ্যায় অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের এমপিরা সংসদ নেতার কক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে সার্চ কমিটির বিষয়ে কথা বলেন।
সূত্র জানায়, এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, ‘আপনারা নাম ঠিক করে পাঠান। নামের ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না, আমি দেখবোও না। আমি নাম পাঠালে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে রাষ্ট্রপতিকে তা মেনে নিতে হবে।’
তিনি ১৪ দলের নেতাদের আলাদা আলাদাভাবে নাম পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলেও সূত্রটি জানায়।
এদিকে বৈঠক সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সংসদ সদস্যদের আবারো সতর্ক করে দিয়েছেন ।
তিনি বলেছেন, ‘দলের সব এমপির কর্মকাণ্ডের বিবরণ আমার হাতে আছে।’ এর মধ্যে ২’শ এমপির কর্মকাণ্ড তিনি দেখেছেন বলেও বৈঠকে জানিয়েছেন। বাকিগুলো দেখছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সব এমপির কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই শেষ হলে তিনি এমপিদের ২৫ জন করে টিম করে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন।
সূত্র জানায়, সংসদ সদস্যদের বিগত ২ বছর ৯ মাসের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গোয়ন্দা সংস্থার তথ্যের আলোকে এমপিদের কার্যক্রমের এ বিবরণ তৈরি করা হয়েছে।
এমপিদের এসব কার্যক্রম পর্যালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, এখনো সময় আছে সতর্ক হয়ে যান। সাধারণ মানুষ ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান।
বৈঠকে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও এমপিদের দ্রুতই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ জানান, ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সংসদীয় দলের বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনার বিষয় নিয়েও কথা হয়। বিধি অনুযায়ী প্রতি বছরই রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর যে আলোচনা হয় এবং কত ঘণ্টা আলোচনা হবে, কে কে আলোচনায় অংশ নেবেন এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ আরো বলেন, ‘১১৮ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি সবার মতামত চেয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো সার্চ কমিটিতে যেসব নাম দেবে, সেগুলো বিচার বিশ্লেষণ করেই রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। আর যদি কোনো রাজনৈতিক দল সার্চ কমিটিতে নাম না পাঠায়, তাহলে সার্চ কমিটির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব বলে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।’