সিটি নির্বাচন: জনতার রায়ে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটের নগর পিতা নির্বাচিত

সিটি নির্বাচন: জনতার রায়ে রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও সিলেটের নগর পিতা নির্বাচিত

চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় হলো জনতার। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চার সিটিতেই মেয়র পদে জয়লাভ করেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা।

পূণ্যভূমি সিলেটের মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। প্রায় দুই যুগ মেয়র পদে আসীন থাকা বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানকে ৩৮ হাজার ৪৪৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হন তিনি। নানা শংকা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকে পেছনে ফেলে বিজয়ের মালায় শিক্ত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেটে ১২৮টি কেন্দ্রের সবকয়টিতে ১৮ দলীয় জোট প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী (টেলিভিশন) পেয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৫৯৯ ভোট এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরান (আনারস) পেয়েছেন ৭৩ হাজার ১৫০ ভোট।

বরিশালে ১০০টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকয়টির বেসরকারি ফলাফলে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৮৩ হাজার ৭৯৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরন পেয়েছেন ৬৬ হাজার ভোট।

খুলনা সিটির ২৮৮টি কেন্দ্রের সবকটির বেসরকারি ফলাফলে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনি (আনারস) পেয়েছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ ভোট এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক (তালা) পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৮ ভোট। মনি ৬১ হাজার ২০৭ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছে।

রাজশাহী সিটির ১৩৭ কেন্দ্রের সবকটির বেসরকারি ফলাফলে ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী বুলবুল ৪৭ হাজার ৩৩২ ভোটের ব্যাবধানে বিজয়ী হয়েছেন।  বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ ভোট এবং অপর দিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৭২৬ ভোট।

তবে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে ৭টি ভোট কক্ষের একটিতে ইভিএম ত্রুটির কারণে ৩৬০টি ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই কেন্দ্রে
মোট ভোটার সংখ্যা ২৪১৮।

এর আগে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ভোটগ্রহণ। শনিবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

নির্বাচন চলাকালে খুলনায় একজন মারা গেছেন। বরিশালে দুই মেয়র প্রার্থীর সামনেই সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া তেমন কেনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

চার সিটির ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

এ ছাড়া নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে চার সিটিতে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়। সব মিলিয়ে চার সিটিতে ১১৮টি ভ্রাম্যমাণ ও ৪০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে।

চার সিটিতে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টায় ভোট পড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ।

ইসি মনিটরিং সেল থেকে জানা যায়, বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টার রিপোর্টে দেখা যায় রাজশাহীতে ৫০ শতাংশ, খুলনায় ৬০ শতাংশ, বরিশালে ৫৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে।

সিলেট সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন তিনজন মেয়র প্রার্থী। এদের মধ্যে ১৮ দল সমর্থিত আরিফুল হক চৌধুরী, ১৪ দল সমর্থিত বদর উদ্দিন আহমদ কামরান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সালাহ উদ্দিন রিমন। ৩৬ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর ১৩৯ এবং সংরক্ষিত ৩৫ জন প্রতিদ্বন্‌দ্িবতা করছেন। ৩৬ ওয়াডের্র মধ্যে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত।

রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন ১৪ দল সমর্থিত এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ১৮ দল সমর্থিত মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও স্বতন্ত্র মো. হাবিবুর রহমান। সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৫৫ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৬৬ জন। ওয়ার্ড সংখ্যা মোট ৪০টি। এর মধ্যে ৩০টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৯৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫২২ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩৭।

বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে ১৪ দল সমর্থিত মো. শওকত হোসেন হিরন, ১৮ দল সমর্থিত মো. আহসান হাবিব কামাল এবং স্বতন্ত্র মাহমুদুল হক খান মামুন প্রতিদ্বন্‌দ্িবতা করেছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৬ এবং সংরক্ষিত আসনে ৪৫ জন। ৪০ ওয়াডের্র মধ্যে ৩০টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩ হাজার ৬৩২ জন। ভোট কেন্দ্র ১০০টি।

খুলনায় মেয়র প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন ১৮ দল সমর্থিত মো. মনিরুজ্জামান মনি, ১৪ দল সমর্থিত তালুকদার আব্দুল খালেক এবং জাতীয় পার্টি সমর্থিত মো. শফিকুল ইসলাম মধু। ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৩৭ এবং সংরক্ষিত ৪৫ জন। ৪১ ওয়াডের্র মধ্যে ৩১টি সাধারণ এবং ১০টি সংরক্ষিত। খুলনা সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ২৮৮টি।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর