অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। রাত পোহালে ভোটগ্রহণে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। ৪ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহীর ৬৪২টি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্সসহ ভোটের সরঞ্জাম পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার সকাল থেকে এ সব সরঞ্জাম বিতরণ শুরু হয়। এ ছাড়াও চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল। তবে এখনও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী সিটি: নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো নগরী। এজন্য গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়। পুলিশের পাশাপাশি নগরীতে টহল দিচ্ছে র্যাব ও বিজিবি।
শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর গভ ল্যাবরেটরি হাইস্কুলে স্থাপিত অস্থায়ী নির্বাচন অফিস থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালটবাঙ, ব্যালট পেপার ও নির্বাচন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেমেছেন। তারা আচরণবিধি মনিটরিং করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত ১০টি আসনের জন্য রয়েছেন ১০জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আর এম পি কমিশনার এস এম মনিরুজ্জামান।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর প্রবেশ পথ কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়ক, নওদাপাড়া ও অক্ট্রয় মোড়ে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। নগরীর মধ্যে শাহমখদুম থানার মোড়, গৌরহাঙ্গা রেলগেট, সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, কল্পনা হলের মোড়, লক্ষ্মীপুর মোড়, সদর হাসপাতালের মোড়, আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোবাইল চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে দেহ তল্লাশি করা হচ্ছে। আটক করা হচ্ছে বহিরাগতদের। বৃহস্পতিবার রাত থেকে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে।
অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে এবার মোট ১৩৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে ১০৪টি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এরই মধ্যে সনাক্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া ৩৩টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামান জানান, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে সশস্ত্র আনসার সদস্যসহ নিয়মিত ফোর্স ছাড়াও অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে র্যাব-পুলিশের পৃথক মোবাইল টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রস্তুত থাকবে। কোনো কেন্দ্রে গোলযোগ দেখা দিলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।
খুলনা: দুপুর ১২টার পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। শহরে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে। খুলনা সিটিতে মোট ভোট কেন্দ্র ২৮৮টি। সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭১৬টি ব্যালট বাক্স পাঠানো শুরু হয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৩১টি সাধারণ ও সংরক্ষিত (নারী) ১০টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার মোস্তফা ফারুক জানান, সকাল থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭১৬টি ব্যালট বাঙ পাঠানো শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৫০৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ২৮৮টি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২০২টি। বুথ সংখ্যা ১ হাজার ৪২৮টি। এছাড়া ৩৩টি অস্থায়ী বুথ রাখা হয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন ২৮৮ জন প্রিজাইডিং অফিসার এবং ২৮৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার।
সিলেট: শুক্রবার সকাল থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রগুলোতে পাঠানো হয়েছে। শহরে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি টহল দিচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ৫ প্লাটুন বিজিবি রয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৬ জন্য ভোটার রয়েছেন। ২৭টি ওয়ার্ডে ১২৮টি ভোট কেন্দ্র ও ৮৯৬টি বুথ রয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম এজহারুল হক জানিয়েছেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি বুথের জন্য একটি করে ব্যালট বাঙ বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া ছবিসহ ভোটার তালিকা, সিল, কালি, মোমবাতিসহ যাবতীয় কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার ২৭টি ওয়ার্ডের ১২৮টি ভোট সেন্টারে ২ হাজার ৮শ’ ১৫ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ১শ’ ২৭ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৮শ’ ৯৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ৭শ’ ৯২ জন পোলিং অফিসার থাকবেন। তাদের ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরিশাল: শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। শহরে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছে। সকাল থেকে ১০০ কেন্দ্রে ৬৬৪টি স্বচ্ছ ব্যালট বাঙসহ ব্যালট পেপার এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানান, সকাল থেকে ১০০ কেন্দ্রে ৬৬৪টি স্বচ্ছ ব্যালট বাঙসহ ব্যালট পেপার এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়েছে। ওই সকল কেন্দ্রে ১০০ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩০৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ৬১৮ জন পুলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাহী ও জুডিশিয়াল বিভাগ। পুলিশ প্রশাসন ৬০টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিন জানান, নির্বাচনে নগরীর ১০০টি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের অবাধে ভোট প্রদানের জন্য এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাড়ে ৪ হাজারের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। এর মধ্যে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের ৬০টি মোবাইল টিম, ১৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, র্যাব-৮ এর ২০টি মোবাইল টিম, ৯৬ জন বিজিবি সদস্য ও আনসার বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। কীর্তনখোলা নদীর ৫টি পয়েন্টে কোস্টগার্ডের তিনটি টহল টিম দায়িত্ব পালন করবে।
এছাড়া নদী পথে পুলিশেরও দুটি টিম দায়িত্ব পালন করবে। দুটি মেডিকেল টিম ও একটি দমকল ইউনিট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। তিনি জানান, ১০০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬০টি কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৪০টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো প্রার্থীদের বাসভবন সংলগ্ন হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে। ওই সকল কেন্দ্রে সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি দুইজন অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু ইউসুফ রেজাউর রহমান জানান, নির্বাচনকালীন সময়ে ২২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন।