রাজধানীর কদমতলী থানার কমিশনার রোড এলাকায় গুলি করে ও কুপিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাজিদুর রহমান সাজু (২৬) হত্যার ঘটনার পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। ফলে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেছে নিহতের পরিবার।
এদিকে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা এবং স্থানীয় প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে এলাকায় নানা ধরণের অপকর্মে বাধা দেওয়া, অবাধ চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করার কারণে সাজুকে হত্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে নিহতের পরিবার।
হত্যা মামলার বাদী নিহত সাজুর পিতা সাইদুর রহমান সাইদ বাংলানিউজকে জানান, সাজু হত্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র পরিকল্পনা করে আসছিল। গত সোমবার হত্যার আগে আরও তিনবার সাজুর ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তবে তিনবারই প্রাণে বেঁচে যান সাজু।
হত্যার বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে সাইদুর অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, এজাহারে উল্লেখিত আসামি বাপ্পারাজের পিতা কানা জব্বার হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডের একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। পিতা-পুত্রের অবাধ মাদক ব্যবসায় এলাকায় একমাত্র সাজু প্রতিবাদ এবং মাদক ব্যবসা বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়াও এজাহারে উল্লেখিত আরেক আসামি অনিকের পিতা একজন ফাঁসির আসামি এবং তার পুরো পরিবার এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী।
সাইদুর অভিযোগ করে আরও বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন এলাকায় অবাধে চাঁদাবাজি করতে পারতোনা একমাত্র তার ছেলে সাজুর কারণে। আবার সম্প্রতি পুলিশের তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্ল্যা আমিরের লোকজন এলাকার দু’টি বাসায় ১০ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করলে সেখানেও সাজু বাধা দেন।
নিহতের বাবা সাইদুর বলেন, গত বছর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদউল্লাহ হত্যার ঘটনায় আরেক নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে কারাবন্দী সেই নেতা মোবাইল ফোনে সাজুকে তার পক্ষে কাজ করার জন্য বললে সাজু তাতে সায় দেননি। এছাড়া অল্প বয়সে নেতা হিসেবে এলাকায় সাজুর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক নেতাই তার ওপর ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।
মূলত এসব ঘটনার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি কারণে শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্লা আমিরের লোকজন ও জেলে থাকা ওই নেতাসহ প্রায় ২৫-৩০ জনের একটি চক্র স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসীকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে সাইদুর অভিযোগ করেন।
ডিবিতে মামলা স্থানান্তরিত করার দাবি প্রসঙ্গে সাইদুর বলেন, ঘটনার পর থেকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরণের আলাপ-আলোচনা করেনি। এমনকি সাজুর ওপর তিনবার হামলার বিষয়ে এবং হামলাকারীদের ব্যাপারে জানার পরেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা করছে না বলেই হত্যা মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের জন্য শুক্রবার তিনি আবেদন করেছেন।
এদিকে এজাহারে উল্লেখিত আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাকের মো. জোবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, এজাহারে উল্লেখিত কোনো আসামিকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। অধিকাংশ আসামি একই এলাকার এবং ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক আছে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই শাকের পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং তদন্ত অব্যাহত আছে জানিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম বলেন, ভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সাজুকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এচাড়াও নিহত সাজুর বিরুদ্ধেও থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় জুরাইনের হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোড এলাকায় মুখোশধারী সাত-আটজন সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে এবং গুলি করে ৮৯ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজিদুর রহমানকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বুধবার নিহত সাজিদুরের পিতা সাইদুর বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।