ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নিষেধাজ্ঞার কারণে রোববারের পূর্ব ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি পিছিয়ে সোমবার পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাতটার পর দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে গণমিছিল কর্মসূচি রাজধানীতে একদিন পিছিয়ে দিয়েছি। রোববারের পরিবর্তে সোমবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণমিছিল শুরু হবে। তবে সারা দেশের জেলা-উপজেলায় পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী রোববারই গণমিছিল হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকার মনে করে একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচির কারণে সংঘর্ষ হতে পারে সেজন্য রোববার ১৪৪ জারি করেছে পুলিশ। তাই আমরা আমাদের কর্মসূচি একদিন পিছিয়ে দিয়েছি। আমাদের এই সহনশীলতাকে যেন সরকার কোনোভাবেই দুর্বলতাকে মনে না করে। আমরা সাংঘর্ষিক কর্মসূচিতে বিশ্বাস করি না।’
ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের জনসভা থেকে ২৯ জানুয়ারি সারা দেশে মহানগর ও জেলা শহরে গণমিছিলের কর্মসূচি ও ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় দেখলাম ১২ মার্চ আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ ২৯ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়। এই অযুহাতে আজ (শনিবার) দুপুর দুইটায় ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ ঢাকায় সকল প্রকার সমাবেশ ও মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণমিছিলের কর্মসূচি ছিলো। বার বার বলে এসেছি এটা হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকার তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহি:প্রকাশ ঘটিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর মাধ্যমে তারা আবার প্রমাণ করলো যে তারা জনগণের সম্পৃক্ততাকে ভয় পায়। সেজন্য অগণতান্ত্রিক পথ বেছে নিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারির পর খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির মিটিং ডাকেন। এ মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই গণমিছিল ৩০ তারিখ সোমবার দুপুর দুইটায় হবে। আমাদের সহনশীলতাকে যেন দুর্বলতা মনে করা না হয়। আশা করি সরকার গণমিছিল সফল করতে সহযোগিতা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অন্য জেলা ও মহানগরের কর্মসূচি চলবে। সেই সব জেলা ও মহানগরে যদি সরকার কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই সব জেলা কমিটি নতুন কর্মসূচি হাতে নেবে।’
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে হাজির ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপি, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সংরক্ষিত আসনের এমপি শাম্মী আকতার প্রমুখ।
এর আগে দুপুরে চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বাংলানিউজকে জানান, রোববার বিএনপির পূর্ব ঘোষিত গণ-মিছিল কর্মসূচি পালনের আগের দিন আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) জারি করা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় নির্ধারণেই মূলত খালেদা জিয়া এ বৈঠক ডেকেছেন।
স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক শেষে চার দলীয় জোটনেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার ও ডা. আব্দুল্লাহ তাহের এবং ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লফিত নেজামী।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে আধাঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর চলে যাওয়ার পথে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘পরিবর্তিত কর্মসূচির সঙ্গে আমরা একমত। আশা করি সরকার এতে বাধা দেবে না।’
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া গত ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে ২৯ জানুয়ারি গণমিছিল আয়োজনের ঘোষণা দেন। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ একই দিন ঢাকায় সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা। এ পরিস্থিতিতে রোববার ভোর ছ’টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ।