সাভারের রানা প্লাজা ধসের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তরের ৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে এ কথা জানিয়েছেন শ্রম সচিব। সাভারে রানা প্লাজা ধসের জন্য ২৪ জনকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা হলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তরের আট কর্মকর্তা, সাভার পৌরসভার মেয়রসহ ১০ কর্মকর্তা এবং ভবনের দুই ও পোশাক কারখানার চার মালিক। শ্রম মন্ত্রণালয় তাদের আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাশাপাশি বড় ধরনের এই বিপর্যয় ও হতাহতের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না বলে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও শ্রম পরিদপ্তরের পরিচালক খুরশিদুল আলম গত ২৭ মে প্রতিবেদনটি শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপারের কাছে জমা দেন। এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ঘটনায় তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে রানা প্লাজা ও সেখানকার পোশাক কারখানার মালিকসহ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দায়ী করা হয়েছিল।
নয়তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে গত ২৪ এপ্রিল। এই ভবনে পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানা ছিল। ভবনধসে এ পর্যন্ত এক হাজার ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, রানা প্লাজায় ফাটল ধরার বিষয়টি ঘটনার আগের দিন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পরও কারখানা বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাই বড় ধরনের অপরাধ করেছেন। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে এ অপরাধের জন্য দায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়ী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবনধসের ঘটনার দিন সকালে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরপর সব জেনারেটর একসঙ্গে চালু হওয়ায় সৃষ্ট কম্পনের (ভাইব্রেশন) ফলে ফাটল ধরা ভবনটি ধসে পড়ে। তদন্তে প্রমাণ হয়েছে, কেবল নিউ ওয়েভ বটমস ও নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানার লে-আউট পরিকল্পনায় জেনারেটর কক্ষের নকশা ছিল। এই দুটি নকশা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছেন ঢাকা বিভাগীয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন দপ্তরের পরিদর্শক (প্রকৌশল) ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলাম। আর এটা অনুমোদন করেছেন তখনকার উপপ্রধান পরিদর্শক (সাধারণ) আব্দুস সামাদ ও টঙ্গীর শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণকেন্দ্র (আইআরআই) প্রকল্পের পরিচালক বেলায়েত হোসেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের নকশা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করে ও অনুমোদন দিয়ে এ কর্মকর্তারা এত বড় দুর্ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, এই কর্মকর্তারা ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৬১, ৮৫, ৩১৯ ও ৩২৬ ধারা, ১৯৭৯ সালের বিধিমালার ৩, ৪, ৫ এবং ৩৮ ধারা অব্যাহতভাবে লঙ্ঘন করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।