অনুৎপাদনশীল ও অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ঋণ প্রবাহ টেনে ধরে উৎপাদন খাত, কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগে অর্থের জোগান নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে দেশজ উৎপাদন প্রক্ষেপন করা হয়েছে সাড়ে ছয় থেকে সাত শতাংশ।
আর বর্তমান অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি এক অংকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১-১২ অর্থবছরের দ্বিতীয় অর্ধের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছেন।
নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির টানতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কিছুটা কমানো হয়েছে। ধরা হয়েছে ১৬ শতাংশ। অর্থ বছরের প্রথম মুদ্রানীতিতে এটা ধরা হয়েছিলো ১৮ শতাংশ। অপরদিকে সররকারি খাতে তা রাখা হয়েছে ৩১ শতাংশ। তবে বর্তমানে বেসরকারি খাতে প্রকৃত মুদ্রা সরবরাহ ১৮ শতাংশ। আর সরকারি খাতে ৬২ শতাংশ।
তবে আতিউর রহমান বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ সামান্য কমানো হলেও হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। উৎপাদনশীল খাতে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। সরকারের ধার যদি কমে তবে সে অর্থ বেসরকারি খাতে যাবে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যে প্রতিকূল চাপ মোকাবেলার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত ঋণের যোগান অব্যাহত রাখা হবে।
তবে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজমী বলেন, বর্তমানে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ৬২ শতাংশ, সেখানে ৩১ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। ফলে সরকারি ঋণ কমানোর কথা বলা হয়েছে।
তবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের মাত্রা যতে ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য যোগানের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলেও জানান গভর্নর।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি সংযত এবং বর্তমান অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জ্স্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ শতাংশ। আর রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ২ শতাংশ।
এক প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ মালিক কাজমী জানান, সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও এক অংক মূল্যস্ফীতি (নয় শতাংশ) যোগ করে মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিলাসিতার জন্য ঋণ এবং ভোক্তাঋণ নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে অনুৎপাদনশীল খাত বলতে অনেক খাত বোঝায়। শুধু পুঁজি বাজার নয়।
এ সময় ড. আতিউর রহমান বলেন, আমানত ও ঋণের সুদের হারের ব্যবধানে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। এজন্য উচ্চ ঝুঁকিবাহী ভোক্তাঋণ এবং এসএমই ঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতে ঋণের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ রাখা সম্ভব হবে।
গভর্নর বলেন,২০১১ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় গড়ে দশ দশমিক সাত শতাংশ। এর অনেকগুলো কারণ আছে। এর জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণ দায়ী। তবে খাদ্য বহির্ভুত মূল্যস্ফীতি মূলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সূত্রে এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খাদ্য মূল্যের ক্ষেত্রে মুদ্রানীতি কাজ করে না বলে জানান কাজমী।
আতিউর রহমান বলেন, সরকারি খাতে বৈদেশিক সহায়তার অন্তঃপ্রবাহ সম্প্রতি বিশেষভাবে দূর্বল হয়েছে। ফলে চাপ সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে। এ কারণে গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমুল্যায়ন ঘটেছে ১৫ শতাংশ। এসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলার থেকে নয়শ’ কোটি ডলার নেমে এসেছে। তবে চিত্র এখন বদলে যাচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমে গেছে। বেড়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। আশা করা যায়, দ্রুত বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ মালিক কাজমী বলেন, সরকারের ঋণ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ নেই। সরকারের লাগলে চাইবে। সেটি দিতে হবে।
পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) কমানোর প্রশ্নে গভর্নর বলেন, ভারতে মূল্যস্ফীতি সাত থেকে আট শতাংশ। বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি হোক তারপর দেখা যাবে।