সিদ্ধান্তটি আবেগতাড়িত, এতে ভুল নেই। জিম্বাবুয়েতে দল-সংশ্লিষ্টরাও এটাই বলছেন। তবে আবেগের বিস্ফোরণ পদত্যাগে রূপ নিল কি শুধু দল সিরিজ হেরেছে বলেই? সমীকরণ কি এতটাই সরল! বিসিবির প্রধান নাজমুল হাসান কাল যা বললেন, তাতে পরিষ্কার যে, আড়ালের অজানা গল্প আছে যথেষ্টই। ‘দলে টিমওয়ার্ক নেই, ঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছিলেন না’ বলেই নাকি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম!
আর সবার মতো বোর্ডের কর্তাদের কাছেও বিস্ময় হয়ে এসেছে মুশফিকের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা। পরশু রাতেই ফোনে মুশফিকের সঙ্গে কথা বলেছেন বোর্ডের অনেকে, পরিবারের সদস্যরা। দলে অন্তঃকলহের যে শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে, সেটিরই কিছুটা ইঙ্গিত মিলল কাল বোর্ড প্রধানের কথায়, ‘মুশফিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। প্রথমে তো কথাই বলতে পারছিল না; কান্নাজড়িত কণ্ঠ ছিল। পরে বলল, “আমি লিড দিতে পারিনি।” এরপর বলল, “টিমওয়ার্ক নেই, টিমওয়ার্ক না থাকলে জিতব কী করে?” আমাদের এখন জানতে হবে, কেন টিমওয়ার্ক কাজ করছিল না। নেতৃত্ব দেওয়ার পথে কী এমন বাধা হচ্ছিল যে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো? দেশে ফিরলেই ওর সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারব। এখনই কিছু বলা তো খুব কঠিন। তবে যদি দেখা যায়, কেউ একজন বা কয়েকজন খেলোয়াড় কোনো কারণে দায়ী; তো দলের স্বার্থে সবচেয়ে কঠোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।’
অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক হিসেবে জিম্বাবুয়ে সিরিজ পর্যন্তই মেয়াদ ছিল মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর। তবে লম্বা সময়ের জন্য কাউকে অধিনায়ক করে দেওয়ার পথে বিসিবি কখনোই হাঁটেনি। লাগামটা নিজেদের হাতে রাখতেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, বরাবরই সিরিজ ধরে ধরে বা অল্প মেয়াদে নেতৃত্ব দেয় বিসিবি। তবে জিম্বাবুয়েতে দল বাজে করলেও মুশফিকের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার ভাবনা বিসিবির ছিল না। বোর্ড সভাপতি কাল সেটা পরিষ্কারই করে দিলেন, ‘ওর নেতৃত্বে আমরা এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ, শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ করেছে দল। ওর নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যা নেই। আমরা এখনো মনে করি না, ওর নেতৃত্বে সমস্যা আছে। ওকে অধিনায়ক হিসেবে না রাখার কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাইনি। হঠাৎ অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা সে কেন বলল, জানি না। তবে এটা অপ্রত্যাশিত, খুবই অপ্রত্যাশিত।’
তবে এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনাতেই মুশফিকের ব্যক্তিত্ব ও ধরনটা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে বলে মনে করেন নাজমুল হাসান। অস্থিরতা-অনিশ্চয়তার মাঝেও এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন মুশফিকদের অভিভাবক, ‘সবার মতো অধিনায়ক হিসেবে ওরও আশা ছিল, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতবে। ফলে হেরে যাওয়ায় আবেগ থেকে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ রকম আচরণ এক দিক থেকে কিছুটা পজিটিভও…একটা ছেলে যখন দলের খারাপ পারফরম্যান্সে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চায়, তার সম্পৃক্ততাটা বোঝা যায়। বোঝা যায়, সে কতটা মন দিয়ে খেলে। অনেকেই তো পারফর্ম না করেও দল খারাপ করলেও দায়িত্বে থাকে। সে-ও এটা করতে পারত, কিন্তু তা করেনি। তবে অবশ্যই বিদেশের মাটিতে আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়নি।’
দলের পারফরম্যান্সে হতাশ বোর্ড প্রধানও। বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ‘বাউন্সি উইকেটে খেলতে অভ্যস্ত নয়, শর্ট বলে দুর্বল’। চোখে লেগেছে ‘ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুড়ে আসা’। তবে এসবের চেয়েও বড় সমস্যা যে মাঠের বাইরে, সেটা তো মুশফিকের সঙ্গে নাজমুল হাসানের ফোনালাপেই পরিষ্কার! সেই সমস্যার শেকড় খুঁজে বের করতে চান বোর্ড প্রধান, ‘যাঁরা ওখানে আছেন, তাঁদের বলেছি খোঁজ নিতে বা তদন্ত করতে। দল দেশে ফিরলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।’