চীনের ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন বর্ষ পালিত হলো গত সোমবার। নতুন বর্ষ পৃথিবীর জন্য কী মজুদ রেখেছে। চীনের অর্থনীতি কেমন যাবে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে জিতেবে আর ইউরোজোন সঙ্কটটের ভবিষ্যতই বা কি- এসব নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন চীনের ফেং শুই মাস্টাররা।
নতুন বর্ষে জ্যোতিষশাস্ত্র বিশারদ এবং ভবিষ্যৎ বক্তারা বলছেন, এবারের ড্রাগন পৃথিবীতে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বয়ে আনবে। সঙ্গে থাকবে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে ইউরোপে সঙ্কট আরো বাড়বে।
হংকংয়ের ফেং শুই মাস্টার অ্যানথনি চেং বলছেন, ড্রাগন বর্ষে বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির থাকবে কারণ, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এখনও মন্দা কাটিয়ে উঠেতে পারেনি।
জ্যোতিষী পিটার সো বলছেন, এ বছরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কিছু সুসংবাদ রয়েছে। কিন্তু তার গণনায় ইউরোপের জন্য কোনো সুখবর নেই।
তার মতে, ইউরোপ খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। কমপক্ষে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলকে ভুগতে হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালের মধ্যেই তার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে পারবে বলে গণনায় পাওয়া যাচ্ছে।
আপনি যদি ড্রাগনের পিঠে চড়তে চান এবং ২০১২ সালে বিনিয়োগে আগ্রহী হন তাহেলে চোখ বন্ধ করে রাশিয়া এবং চীনে বিনিয়োগ করতে পারেন। চেং গণনা করে দেখেছেন, এই দুই উদীয়মান বাজার ২০১২’র অস্থির বাজারের মধ্যেও সবচে ভাল পারফরমেন্স দেখাবে।
সেই সঙ্গে সবার জন্য একটি বিস্ময়ও অপেক্ষা করছে। বিশেষ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এ বছরই নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব খুঁজতে তাদের ১৮তম কংগ্রেস অনুষ্ঠান করবে।
খারাপ খবর হচ্ছে, এ বছরের মাঝামাঝি চীনে ভয়াবহ দুর্নীতির কেলেঙ্কারি প্রকাশ পেয়ে যাবে। তবে কে বা কারা এই দুর্নীতি করবে তা বলতে রাজি হননি চেং।
চেং বলেন, ‘আমি আরো ভবিষ্যদ্বাণী করছি, হংকং এবং চীনের মূলভূখণ্ডে অনেক ক’জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে। অনেককে জোর করে বের করে দেওয়া হবে অথবা মারা যাবে।’
এগুলো নিছক ভবিষ্যদ্বাণী হলেও জনপ্রিয় এই ভবিষ্যত বক্তাদের প্রতি অনেক চীনার গভীর আস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা এই ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করছেন।
‘ফেই শুই’ হচ্ছে প্রাচীন চীনা সংস্কৃতিতে ‘চি’ বা জীবনী শক্তি অনুসন্ধানের একটি ঐতিহ্য। চীনাদের মধ্যে এই সংস্কৃতির চর্চা প্রাত্যহিক। প্রতিবছর বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ফেং শুই সূচক প্রকাশ করে থাকে।
চীন, রাশিয়া আর ইউরোপ নিয়ে কথা বললেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেশ সাবধানতা অবলম্বন করেছে ভবিষ্যদ্বক্তারা। এ কারণে যথার্থ তথ্য যেমন প্রার্থীদের জন্মতারিখ, স্থান এসব না জেনে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাননি তারা।
ফেং শুই মাস্টার চেং একটু হেঁয়ালি করে বলেছেন, ‘কখনও কখনও ভাগ্য নির্ভর করে দেশের ওপর ব্যক্তির ওপর নয়। বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাগ্য সুপ্রসন্ন দেখা যাচ্ছে। সুতরাং যেইই নির্বাচিত হোক তাদের নতুন বছর ভালই যাবে।
ড্রাগন বছরে বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনাও প্রবল। হংকংয়ের বিখ্যাত জ্যোতিষী আলিওন ইয়েও বলেছেন, ঝড় এবং বন্যার প্রস্তুতি নিতে হবে। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব চীনে ভয়াবহ বন্যা বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সঙ্গে আছে ভূকম্পন। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং চীনের সিচুয়ান, ইউনান এবং গিঝু অঞ্চল অনেক বেশি ভূমিকম্প প্রবণ হবে। এই অঞ্চলগুলোতে ধারাবাহিক ভূমিকম্প হতে পারে।
চীনাদের এই সব ভবিষ্যদ্বাণী অগাধ বিশ্বাস। প্রাচীন চীনারা আজও জ্যোতিষ এবং ভূগণনার উন্নয়নে সময় ব্যয় করেছে। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরী অন্য দেশগুলোতে ভবিষ্যৎ গণনার জন্য অন্য পদ্ধতির তালাশ করেছে।
যেমন, এই কাজে বর্তমান দক্ষিণ আমেরিকার মায়া সভ্যতার লোকেরা একটি বিশেষ পঞ্জিকা ব্যবহার করত। তাদের পঞ্জিকা মতে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে মায়াদের এটা একটা নিছক বিশ্বাস। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।