চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় চট্টগ্রামের একটি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন তৎকালীন শিল্প সচিব (পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিল্প উপদেষ্টা) ড. শোয়েব আহমেদ।
বুধবার বেলা ১২টা ১০ মিনিট থেকে মাঝে দেড় ঘণ্টার বিরতি ছাড়া বিকেল ৫টা পর্যন্ত একটানা সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক-১ এস এম মুজিবর রহমান আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামালউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘মামলার সাক্ষী হিসেবে ড. শোয়েব আহমেদ আজ অস্ত্র আটক আইনে দায়ের হওয়া মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ১৫ ফেব্রুয়ারি আবার শুরু হবে। একইসঙ্গে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে বিচারক আদেশ দিয়েছেন।’
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় ড. শোয়েব আহমেদকে জামায়াত ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী এবং সিইউএফএলের সাবেক এমডি মোহসীন উদ্দিন তালুকদারের আইনজীবী ফজলুল করিম ভূঁইয়া এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার পর্যায়ক্রমে জেরা করেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দশ ট্রাক অস্ত্র আটক ও চোরাচালানের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় চট্টগ্রামের আদালতে সাক্ষ্য দেন সিএমপির তৎকালীন সহকারী-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুর রহমান। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরাও করেন।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মামলার সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত ৯ জন এবং মূল চার্জশিটের ২ জনসহ মোট ১১ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
এছাড়া সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাদেক হাসান রুমি, বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান বীরবিক্রম, এনএসআইর পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুর রহমান চৌধুরী ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী এবং সিএমপির তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) আব্দুল্লাহ হেল বাকী।
উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে তিন বছর অধিকতর তদন্তের পর ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডি আদালতে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিচার।
আসামিদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন তারা হলেন— জামায়াত নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন, উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা সিইউএফএলের সাবেক এমডি মোহসীন তালুকদার, সাবেক মহাব্যবস্থাপক এনামুল হক, চোরাচালানী হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ও ট্রলার মালিক দীন মোহাম্মদ।
এছাড়া সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত দু’আসামি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) ’র সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নূরুল আমিন বর্তমানে পলাতক আছেন।