মেয়াদ উত্তীর্ণ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি সম্পর্কে বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে তাদের প্রক্রিয়ায় যদি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই সংসদে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। দেশ পরিচালনা ও স্বার্থে নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে বিরোধী দল অংশগ্রহণ করুক।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়েজিত ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও রাষ্ট্রপতির সুপারিশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বৈঠকে প্রশ্ন রাখেন- এই সার্চ কমিটির মাধ্যমে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বির্তকিত নির্বাচন কমিশন গঠন করা ভালো নাকি সামনে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংসদে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত নতুন আইন পাস করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা ভালো? সামনের দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন আইন গঠন করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘১৫ দিন বা ১ মাস যদি নির্বাচন কমিশন নাও থাকে তবে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। আমাদের তো আইন নেই। আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশন গঠন হলে এর গ্রহণযোগ্যতাও বেশি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্চের দিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। একটু দেরি হলে সাংবাধানিক বা আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। আমাদের সংবিধান অনুসারে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। বর্তমানে যে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে তা জনমত দ্বারা নির্বাচিত নয়।’
সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বৈঠকে মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘আমাদের দেশে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৩৯টি। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২২ ডিসেম্বর থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। এতোগুলো দলের মধ্যে কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে ২৩টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলো?’
তিনি আরো বলেন, ‘সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী সব দলকেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে সংলাপে ডাকা হয়নি।’
তিনি রাষ্ট্রপতির সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটিতে প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন। রাষ্ট্রপতির প্রস্তাবে উল্লেখিত ৫ সদস্যের বাইরের উপযুক্ত ব্যক্তিদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির এই প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে দুদক চেয়ারম্যনকে বাদ দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির সংলাপকে অবমূলায়ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে, কোনো আইনের মাধ্যমে নয়। অথচ সাংবিধানিকভাবে আইনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এখানে সংবিধানকেও উপেক্ষা করা হলো।’
নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু সমাধান না হলে নির্বাচন হবে কিনা- এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
আয়োজক সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এম হাফিজউদ্দিনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পুলিশের সাবেক আইজি এএসএম শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনাম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।