রাজ্যের এক শীর্ষ কেএলও জঙ্গির সঙ্গে নামের মিল থাকায় ১০ বছর ধরে কোচবিহারের জেলে আটক রয়েছেন বাংলাদেশের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হোসেনের সন্তান আসিফ ইকবাল মিল্টন।
মিল্টন বাংলাদেশের কামাত আঙারিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভুরুঙ্গামারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ছিলেন।
জানা গেছে, ২০০০ সালের ১১ ডিসেম্বর কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার সাহেবগঞ্জ বাজারে টলিউডের অভিনেত্রী ‘রূপা গাঙ্গুলি নাইট’ নামে একটি জলসা দেখতে আসেন মিল্টন। রাত আড়াইটার দিকে ফেরার পথে সীমান্ত অতিক্রম করতে গেলে বিএসএফ তাকে আটক করে।
জানা যায়, ওইদিন জলসার কারণে বিএসএফ ও বিডিআরের আলোচনাক্রমে সীমান্ত উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ যোগ দিয়েছিল। তারপরেও মিল্টনকে আটক করা হয়।
অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিএসএফ তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কয়েকমাস সাজা খাটার পর ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তুফানগঞ্জ জেল থেকে পুলিশ তাকে পুশব্যাক করার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু পরের দিন ২৭ ডিসেম্বর মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কেএলও শীর্ষ জঙ্গি মিহির দাস ওরফে মিল্টন সন্দেহে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
২০০২ সালের ২৯ জুন মিল্টনকে পাঠানো হয় কোচবিহার জেলে। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধি ১২০বি/১২১এ/১২২/১২৩/১২৪বি/৩৮৪ ধারায় মামলা করে পুলিশ। কোচবিহার ফার্স্ট ট্রাক কোর্টে তার বিচার চলছে। অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতে এখনও তার মামলা চলছে।
মিল্টনের আইনজীবী আবদুল জলিল আহমেদ বাংলানিউজকে ফোনে বলেন, ‘ওর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা চলছে। মামলাটি এখন শেষ পর্যায়ে। আমি চাই ও ছাড়া পেয়ে দেশে ফিরে যাক।’
বাংলাদেশ থেকে মিল্টনের মা মামিদা বেগম জানান, ‘পুত্রশোকে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে দিন। ছেলেকে দেখে আমি মরে যেতে চাই।’
বাংলাদেশ থেকে মানবধিকারকর্মী সোহলে রানা সম্প্রতি কোচবিহারের এসেছেন। তিনি মিল্টনের মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুধু নাম মিল্টন হওয়ার কারণে তাকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে রাখা হয়েছে। মিল্টন একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার নামে বাংলাদেশে কোনো মামলা নেই। তাকে যখন ধরা হয়, তখন তার বয়স ছিল ২৪। এখন বয়স ৩৪ বছর।’
যাকে নিয়ে এই নাম বিভ্রাট সেই কেএলও জঙ্গি মিহির দাস ওরফে মিল্টন ২০০৩ সালে ভুটানে সেনা অভিযানের সময় রয়েল ভুটান আর্মির হাতে ধরা পড়ে। মিহির ২০১১ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা দুঃখজনক। আমি কোচবিহার জেলে ৩ দিন ছিলাম। তখন তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি আমার জন্য ঘটলে, আমি দুঃখিত। আমি চাই তাকে অবিলম্বে ছেড়ে দেওয়া হোক। আমি একজন কেএও জঙ্গি হিসেবে ছাড়া পেতে পারি, অথচ নির্দোষ এক যুবক, কলেজ ছাত্রকে ছাড়া হচ্ছে না?’