ব্রিটেনের সাবেক ফার্মিং অ্যান্ড এনভায়রমেন্ট মন্ত্রী জিম ফিটজপ্যাট্রিক এমপি বলেছেন, ‘ব্রিটেন ও বাংলাদেশের মধ্যে মৌলবাদী চরমপন্থী সংগঠনগুলোর পারস্পরিক যোগসূত্রের বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তুলবেন।। বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের পরিকল্পনাও তিনি জানতে চাইবেন।
বুধবার লন্ডন সময় সকাল ৯টায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এরিয়ার পর্টকিউলিস হাউসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সাথে এক বৈঠকে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী জিম ফিটজপ্যাট্রিক এই আশ্বাস দেন। বৈঠকে শাহরিয়ার কবিরের সাথে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ, প্রচ্ছায়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) শহীদ উদ্দিন খান ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতা আনসার আহমেদ উল্লাহ।
বৈঠকে শাহরিয়ার কবির বাংলাদেশে নিষিদ্ধ অথচ ব্রিটেনে স্বীকৃত ইসলামিক চরমপন্থী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ব্রিটেন-বাংলাদেশ কানেকশনের বিষয়টি লেবার পার্টির নেতা সাবেক এই মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরলে জিম ফিটজপ্যাট্রিক বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার ব্যর্থ ক্যু চেষ্টার নেপথ্যে হিযবুত তাহরীরের জড়িত থাকার সন্দেহের বিষয়টি জিম ফিটজপ্যাট্রিককে অবহিত করেন শাহরিয়ার কবির। হিযবুত তাহরীরের ব্রিটেন শাখার সাথে বাংলাদেশের হিযবুত তাহরীরের কানেকশনের কথা উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির জিম ফিটজপ্যাট্রিককে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক ব্যর্থ ক্যু চেষ্টার নেপথ্যে ব্রিটেনের হিযবুত তাহরীরের ইন্ধন রয়েছে এমনই সন্দেহ করে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের এই সন্দেহের বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে তিনি সাবেক এই ব্রিটিশ মন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। জবাবে সাবেক মন্ত্রী ফিটজপ্যাট্রিক এই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, দুই দেশে মৌলবাদী চরমপন্থীদের অপতৎপরতা সম্পর্কে ব্রিটেন-বাংলাদেশ গোয়েন্দা রিপোর্ট আদান প্রদান করা উচিত। এতে দুদেশই লাভবান হবে।
চরমপন্থীদের পারষ্পরিক যোগাযোগের বিষয়টিও সব সময় আপডেট থাকবে দু’দেশের সরকার। ফিটজপেট্রিক শাহরিয়ার কবিরকে আশ্বম্ত করে বলেন, পারষ্পরিক গোয়েন্দা রিপোর্ট আদান প্রদানের বিষয়টি সম্পর্কেও তিনি ব্রিটিশ সরকারকে পরামর্শ দেবেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে কতিপয় সেনা সদস্যের ব্যর্থ ক্যু সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে জিম ফিটজপেট্রিক বাংলানিউজকে বলেন, অসাংবিধানিক পন্থায় একটি গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে অসাংবিধানিক পন্থায় জোর করে ক্ষমতাচ্যূত করার এ ধরনের অপচেষ্টা সভ্য দুনিয়ার কেউই মেনে নিতে পারে না।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র সচল রাখার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে কোন মতপার্থক্য থাকা ঠিক নয়, এটি নিশ্চয়ই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলই ভালো বোঝে। সাবেক এই ব্রিটিশ মন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত রাখতে না পারলে কোন দেশই কাঙ্খিত উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির আশা করতে পারে না।
লিবডেম এর ডেপুটি নেতার সাথেও বৈঠক শাহরিয়ার কবিরের
জিম ফিটজপ্যাট্রিক এমপির পর শাহরিয়ার কবির বৈঠক করেন ব্রিটেনের জোট সরকারের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ডেপুটি লিডার সায়মন হিউজ এমপির সাথে। সায়মনের কাছেও শাহরিয়ার তুলে ধরেন মৌলবাদী চরমপন্থীদের ব্রিটেন-বাংলাদেশ কানেকশনের কথা। বৈঠকে সায়মন হিউজ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ও ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনাল সম্পর্কে জানতে চান শাহরিয়ার কবিরের কাছে। ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম, আইন ইত্যাদি সম্পর্কে সায়মন হিউজকে বিস্তারিত অবহিত করেন শাহরিয়ার কবিরের সফরসঙ্গী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা, আন্তর্জাতিক মান ও গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদি বিষয়ে সায়মন হিউজের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তুরিন আফরোজ। বৈঠকে সায়মন হিউজ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উদ্যোগ ট্রাইব্যুনালের স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মানের কারণে যেন বিতর্কিত না হয়, এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। উত্তরে শাহরিয়ার কবির বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালের ইতিহাস বর্ণনা করে সায়মন হিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের রায় বাদী বা আসামি এক পক্ষের বিরুদ্ধে যাবেই, এটিই নিয়ম। আর যে পক্ষের বিরুদ্ধে রায় যাবে, সেই পক্ষ তো সমালোচনা করবেই। সেই দিক থেকে বিচার করলে অতীতের কোন ট্রাইব্যুনালই বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল না। সায়মন হিউজকে তিনি জানান, বাংলাদেশের ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অন্যান্য যে কোনো ওয়ারক্রাইম ট্রাইব্যুনালের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে অভিযুক্তদের।