সারা দেশে আটটি প্রদেশ করতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রস্তাব দিয়েছিলেন অনেক আগেই। এ প্রস্তাবের পক্ষে তিনি প্রচারণাও চালিয়ে আসছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি এ প্রস্তাব দিলেন। ব্যাখ্যা করে বোঝালেন প্রদেশ করার সুবিধার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এরশাদের প্রস্তাবের বিষয়ে নিজের অমতের কথা জানিয়ে দিলেন। বললেন, দেশের ভূখণ্ড এমনিতেই ছোট। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ হয়েছে। এ অবস্থায় প্রদেশ করা হলে রাষ্ট্রের খরচ বাড়বে। কিন্তু জনগণের সেবার পরিধি বাড়বে না। প্রদেশ করার চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করলে এক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যেতে পারে। রাজধানীর বনানীতে মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে বক্তব্য রাখেন এরশাদ। আর্মি গলফ ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এরশাদ তার বক্তব্যে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন। পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের বক্তব্যের জবাব দেন।
এরশাদ বলেন, দেশের সব কিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ঢাকার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। তাই ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা বহন করা সম্ভব নয়। তাই এ মুহূর্তে প্রয়োজন প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ঢাকার নাগরিক জীবনের প্রধান সমস্যা যানজট। বাসা থেকে বেরিয়ে কোন জায়গায় পৌঁছতে কত সময় লাগবে তা কেউ জানেন না। তিনি বলেন, প্রাদেশিক সরকার হলে সারা দেশে হরতাল হতো না। হরতাল হলে একেক প্রদেশে হতো। পরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এরশাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এরশাদ সাহেব প্রস্তাব দিয়েছেন। আসলে দেশকে খণ্ড খণ্ড করার কি কোন প্রয়োজন আছে? তার প্রস্তাব অনুযায়ী প্রদেশ করতে না পারলেও আমরা অন্তত তার রংপুরকে বিভাগ করেছি। আমরা মনে করি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করছে।
জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের উদ্বোধন: গতকাল সকালে মিরপুর-এয়ারপোর্ট রোড ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের নামে ফ্লাইওভারটির নাম রাখার ঘোষণা দেন। এক দশমিক ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ফ্লাইওভার রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযুক্ত করবে এবং এর ফলে রাজধানীর যানজট বহুলাংশে নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নামে ফ্লাইওভারটির নামকরণ হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ১৯৯ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কারিগরি মান বজায় রেখে স্থানীয় সম্পদ ও মেধা ব্যবহার করে ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করবে। এ উপলক্ষে আর্মি গলফ ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইওভারটিকে স্বাধীনতার মাসে ঢাকাবাসীকে সরকারের উপহার হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর জন্য আজ এক আনন্দের দিন। কেননা, এ ফ্লাইওভার হচ্ছে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক করতে সরকারের প্রচেষ্টার আর একটি মাইলফলক। তিনি বলেন, সরকার যানজট নিরসন ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে ঢাকাকে একটি আধুনিক ও উন্নত নগরীতে পরিণত করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া পল্লী অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে দেশব্যাপী রেল ও নৌপথের সংস্কারকাজ চলছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচএম এরশাদ, যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যোগাযোগ সচিব এমএএন সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া এবং ফ্লাইওভারটির প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সাঈদ এম মাসুদ বক্তব্য রাখেন।