সন্ত্রাস বিরোধী ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধসহ ৫টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ উত্থাপন হলো সংসদে।
বুধবার চলতি নবম জাতীয় সংসদের ১২তম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ অধ্যাদেশগুলো উত্থাপন করেন।
অধ্যাদেশগুলো হলো- সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১২, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২, অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারষ্পরিক সহায়তা অধ্যাদেশ ২০১২, মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ ২০১১ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (অবসর) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১১।
সংসদ অধিবেশন না চলা অবস্থায় আইনের আলোকে কোন বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনে সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
কোন অধ্যাদেশ প্রণয়নের পরে তা সংসদের পরবর্তী প্রথম বৈঠকে উত্থাপনের নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে উত্থাপনের ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে অধ্যাদেশ আইনে পরিণত না হলে তা তামাদি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ৫টি অধ্যাদেশ যে এ অধিবেশনেই আইনে পরিণত করা হবে তা নিশ্চিত।
দেশে বিদ্যমান অধ্যাদেশের বাইরে নিয়ম লংঘন করে দেশের বাইরে অর্থ বা সম্পত্তি পাঠানো ও দেশের বাইরের সম্পত্তিতে দেশের স্বার্থ রয়েছে এমন অর্থ ও সম্পত্তি আনা প্রতিরোধে মানি লন্ডারিং আইন, ২০০৯ এ কিছু সংশোধনী এনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান গত ১৬ জানুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করেন।
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে এ অধ্যাদেশের ‘সম্পৃক্ত অপরাধ’ এর সংজ্ঞায় পুঁজিবাজারকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। সম্পৃক্ত অপরাধের ২৮টির মধ্যে ২৫ নম্বরে পুজিবাজার সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ বাজার সম্পর্কিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে তা কাজে লাগিয়ে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে বাজার সুবিধাগ্রহণ ও ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধার লক্ষ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
মানি লন্ডারিং অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে ৪ বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড ও অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বা তার বেশি অর্থ জরিমানা করা হবে।
গত ১৭ জানুয়ারি জারিকৃত অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারষ্পরিক সহায়তা অধ্যাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বাজেয়াপ্ত বা আটক করার জন্য বাংলাদেশ এবং সহায়তার জন্য অনুরোধকারী রাষ্ট্রের আইনে অপরাধ সংঘটন করে এমন বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচারিক কাজ অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
সহায়তার পরিধিতে বলা হয়েছে, কোন বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারষ্পরিক সহায়তার চুক্তি থাকুক বা না থাকুক, অপরাধ সংঘটনের বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত, বিচারিক বা অন্যান্য কার্যধারার বিষয়ে কোন বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক সহায়তা চাওয়া হলে সর্বোত্তম পারষ্পরিক সহযোগিতা করা হবে।
এ অধ্যাদেশের বিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশে আটক রয়েছে এমন ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশ কোন ব্যক্তিকে ট্রানজিটকালীন হেফাজত করতে পারবে এবং বিদেশি রাষ্ট্রের অনুরোধে অপরাধমূলক কার্যের মাধ্যমে সম্পদ অর্জনকারী ব্যক্তির সম্পদ ফ্রিজিং, আটক ও বাজেয়াপ্তের নিদের্শ দিতে পারবে।
এছাড়া কোন বিদেশি আদালত বাজেয়াপ্ত আদেশ দিলে বিদেশি আদালতের রায় বলবৎ করার জন্য বাংলাদেশ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারবে।
১৭ জানুয়ারি জারিকৃত সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১২ এ অস্ত্র সংজ্ঞায় যে কোন ধরনের পারমানবিক, রাসায়নিক ও জীবানু অস্ত্রও অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে মানি চেঞ্জার, স্টক ডিলার ও স্টক ব্রোকার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সংযোজন করা হয়েছে।
এ অধ্যাদেশে দেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করাসহ হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ণ সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের মতো গুরুতর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে যৌন শোষণ, নিপীড়ন বা এ উদ্দেশ্যে ক্রয়, বিক্রয়, স্থানান্তর, চালান, আটক বন্ধে গত ২০ ডিসেম্বর মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ ২০১১ জারি করা হয়।
১৯৭৪ সালের আইনটি অধিক সংশোধন করে গত ২৬ ডিসেম্বর জারি হয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (অবসর) (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১১।