দৃষ্টিনন্দন হাতির ঝিল প্রকল্প এলাকায় বিজিএমইএ ভবন থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ভবনটি হাতির ঝিলের জন্য একটি ক্ষতিকর টিউমার। গতকাল কমনওয়েলথ এসোসিয়েশন অব আর্কিটেক্ট-এর ২০তম জেনারেল এসেম্বলি এবং কনফারেন্সের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি পরিবেশবান্ধব দেশ গড়তে স্থপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। পরামর্শ দেন নির্মাণে দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তাদের ডিজাইনে তুলে ধরার জন্য।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থপতিদের শুধু ভবনের ডিজাইন ও নির্মাণ কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, তাদের পরিবেশবান্ধব দেশ গড়ার কাজেও মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি বলেন, শহর এলাকায় যে কোন স্থাপনা নির্মাণে পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি ডিজাইনেও দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার কথা মনে রাখতে হবে। এসোসিয়েশনের সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও সম্মেলন আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক স্থপতি এএসএম ইসমাইল। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘স্থাপত্য: সচেতনতা ও দায়িত্ব’। ১ হাজার ১শ’ স্থপতি সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। এগুলো একটি জাতির টিকে থাকার অন্যতম উপকরণ। পাশাপাশি ঋতুবৈচিত্র্য, জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য মানুষের জীবন-জীবিকায় নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এজন্য যে কোন স্থাপনা গড়ে তোলার আগে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, যে কোন স্থাপনার কাঠামোগত দিকের সঙ্গে এর নান্দনিক দিকও রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন বর্তমানে সারা বিশ্বের উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সঙ্কট মোকাবিলায় স্থপতিগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিকল্পিত নগরায়নের কথা চিন্তা করে সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ আরবান ফোরাম গঠিত হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ফোরামটি পরিকল্পিত নগরায়নে ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে স্থাপনা নির্মাণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ার লক্ষ্যে ‘ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান’ বা ড্যাপ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সমপ্রতি দৃষ্টিনন্দন হাতির ঝিল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি শুধু ঢাকা শহরের পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে না, এলাকাটি ইতিমধ্যে নগরবাসীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। কিন্তু এ দেশের জনসংখ্যা বিপুল। এর সীমিত জমি থেকে খাদ্য চাহিদা মেটানো, আবাসনের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি এবং কর্মসংস্থানের জন্য কলকারখানা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি রাস্তাঘাট, অফিস-আদালতও গড়তে হবে। এসব কিছুই করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে- যাতে আমাদের সীমিত কৃষি জমি নষ্ট না হয়। তিনি বলেন, শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোকেও পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রতিটি গ্রাম হবে স্বয়ংসম্পন্ন।
অনেকে নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণে দ্বিধা করছেন না। যারা এসব করছেন, তারা মনে করেন যে, নদী বা খালের মধ্যে বিশাল জায়গা ফেলে রাখা অর্থহীন। গাছ লাগানো বা বাগান তৈরি করার মানে হচ্ছে জমি নষ্ট করা। ঢাকা শহরের দিকে তাকালে দেখা যাবে খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠায় ভরে গেছে রাজধানী। অনেক এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কিংবা এম্বুলেন্স যাতায়াতের মতো প্রশ্বস্ত রাস্তাঘাট নেই। প্রধানমন্ত্রী সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে স্থানীয় স্থপতি ও জনশক্তি কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমি চাই আগামী দিনের উন্নয়ন কর্মসূচিতে দেশের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা সম্পৃক্ত হবেন।