সংসদে পাস হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০১৩-এ প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লর রহমান স্বাক্ষর করেছেন। গতকাল সংশোধিত আইনে স্বাক্ষরের পর গেজেট প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া রায় চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত সংগঠনকেও বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হুদা জানান, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (এমেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট-২০১৩ গতকাল সকালেই প্রেসিডেন্টের দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রেসিডেন্ট গতকাল দুপুরে ওই বিলে স্বাক্ষর করেছেন। এর আগে রোববার সংসদে উত্থাপিত বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। মন্ত্রী সংসদীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার, বাদী ও বিবাদীপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের বিধান রেখে পাসের প্রস্তাব করলেও বিলে নতুন সংশোধনীর প্রস্তাব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বিলের ৩ ধারায় দু’টি সংশোধনী এনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। পরে এই সংশোধনী প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বিলটি পাস করা হয়। রাশেদ খান মেনন তার সংশোধনীতে বিলের ৩(১) উপধারায় ইনডিভিজুয়ালস (individuals) ও কমার পর অর অর্গানাইজেশন (or organization) শব্দগুলো যুক্ত করার প্রস্তাব করেন। সংশোধনীর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধ কেবল ব্যক্তির বিষয় নয়, এর সঙ্গে সংগঠনও জড়িত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন বেশ কয়েকটি সংগঠন রাজাকার-আলবদর সৃষ্টি করে গণহত্যা চালিয়েছে, যুদ্ধাপরাধ করেছে। এখন পর্যন্ত স্বাধীনতার বিরোধিতা ও যুদ্ধাপরাধের দায় স্বীকার করে এসব সংগঠন জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনার বিধান রয়েছে। তাই যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি জড়িত সংগঠনগুলোকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর ট্রাইব্যুনালের দু’টি রায়েও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ হয়েছে। তাই ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও বিচারের আওতায় আনতে আমি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছি।
সংসদে পাস হওয়া নতুন আইনটি ২০০৯ সালের ১৪ই জুলাই থেকে কার্যকর হবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার, বাদী ও বিবাদীপক্ষ শুধুমাত্র আপিল করতে পারবে। এছাড়া রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল এবং ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।