রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ফের মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য!

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ফের মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য!

ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্ত্রিত্ব এবং মহাব্যবস্থাপক ইউসূফ আলী মৃধার চাকরি হারানোর ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারও নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে অস্থির হয়েছে উঠেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

অভিযোগ উঠেছে, কিছুদিন নিরব থাকার পর আবারও এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে আবারও রেলমন্ত্রী এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টোরস বিভাগে স্টোর খালাসী পদে নিয়োগ পরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার ৮৪ জনকে মনোনীত করে নিয়োগ পত্র প্রেরণ করা হয়।

এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার পাহাড়তলী কারখানায় বিক্ষোভ করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এক পর্যায়ে এ নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত প্রধান স্টোর কন্ট্রোলার (সিসিএস) এর কক্ষে তালা দেয় শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে রেলওয়ের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রানিং স্টাফ শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘৮৪ জন স্টোর খালাসীর মধ্যে সবাইকে মন্ত্রীর দেয়া তালিকা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রকৃত ও যোগ্য প্রার্থীরা নিয়োগ না পাওয়াতে আমরা প্রতিবাদ করেছি।’

তবে বিভাগটি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো.তাফাজ্জল হোসেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, `বিভাগটি আমার অধীন নয়। ফলে এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’ তবে নিয়োগ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভের বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে জানান।

এদিকে নিয়োগ নিয়ে বিক্ষোভের কারণে পূর্ব রেলে আবারো অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে শ্রমিক- কর্মচারীরা। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করছেন।

অন্যদিকে শ্রমিক নেতাদের পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ না পাওয়াতে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন রেলওয়ের একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে তারা নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নন।

তারা বলছেন, `শ্রমিক নেতারা সব সময় নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত থাকেন। তাদের পছন্দ মতো লোক নিয়োগ না পেলেই তারা আন্দোলন শুরু করেন।`

কর্মকতারা জানান, নিয়োগের আগেই প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। শ্রমিক নেতারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাজ না করে তদবিরেই ব্যস্ত থাকেন।

কর্মকর্তাদের অভিযোগ, দলীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া শ্রমিক-কর্মচারীরাও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাজ না করে মিটিং মিছিল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ফলে রেলে দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে না। বাধাগস্ত হচ্ছে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম।

তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ না দিয়ে অযোগ্য লোক নিয়োগ দেয়ার কারণে প্রতিবাদ করছেন তারা। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি দায়ী করেছেন রেলমন্ত্রীকে।

রেলওয়ে শ্রমিকলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. লোকমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নিয়োগের বিরুদ্ধে নয়। তবে প্রকৃত ও গ্রহণযোগ্য লোককে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি স্টোর খালাসী পদে যে ৮৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেখানে যোগ্য লোককে নিয়োগ দেয়া হয়নি। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এমন লোক নিয়োগ হয়নি।’

রেলমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে রেলের এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা তাদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সীমিত পদে অনেক প্রার্থী থাকবে। সবার চাহিদা মেটানো যাবে না। তবে গ্রহণযোগ্য লোকদের নিতে হবে।’

নিয়োগে কোটা অনুসরণ করলেও কৌশলে নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও শ্রমিক লীগ নেতাদের কোন মূল্যয়ন করা হয়নি অভিযোগ করে লোকমান বলেন, ‘অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও শ্রমিকলীগের সন্তানরা অসহায় অবস্থায় আছে তাদের চাকরির জন্য অনুরোধ করেছিলাম আমরা। আমাদের কথা রাখেনি।’

কর্মকর্তারা মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছে বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর অনুরোধ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তার দেয়া প্রার্থীদের নিয়োগ দিলেই হয়। পুরো তালিকা অনুসরণ করতে হবে এমন কোন কথা নেই।’

 

 

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর