‘সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠাই হবে সরকারের চ্যালেঞ্জ’

‘সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠাই হবে সরকারের চ্যালেঞ্জ’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সরকারের বিগত চার বছরের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করে বলেছেন, বিগত সময়ে সরকারের অনেক সাফল্যের সঙ্গে সীমাবদ্ধতাও আছে। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠাই হবে আগামী এক বছরে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সমপ্রতি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া এ নেতা বলেন, যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল ধারাবাহিকভাবে দেশ শাসনের সুযোগ পায়নি। সামনে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে জনগণ যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেন তাহলে অবশ্যই দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ, হলমার্ক ও ডেসটিনির অর্থ কেলেঙ্কারি, শেয়ারবাজারে অস্থিরতাসহ কিছু বিষয় সরকারকে বিব্রত করেছে উল্লেখ করে এ নেতা জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা সরকারের জন্য ক্ষতির কারণ হলেও অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন প্রতিকার হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে যখন যে ঘটনাই ঘটেছে তখনই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তের প্রয়োজনে অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই মন্ত্রী, এমপি এবং মন্ত্রী মর্যাদার উপদেষ্টাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এখানে সরকার কোন হস্তক্ষেপ করছে না। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণের আগেই তদন্ত সংস্থা তলব করছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করতে পেরেছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করে সরকার ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারের উদ্যোগ নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। অনেকে দ্বিমত করতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতির আলোকে সমস্যা সমাধানই হলো বড়। সরকার সেটি করতে পেরেছে। তিনি বলেন, দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন এখন সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটের মতো। ৩২০০ মেগাওয়াট থেকে চার বছরে উৎপাদন সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা একটি বড় সাফল্য।
জঙ্গি দমনে সরকার সফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে জঙ্গি তৎপরতার জন্য বাংলাদেশের দুর্নাম ছিল। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। এটি মহাজোট সরকারের একটি বড় ধরনের সাফল্য।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে উন্নয়নে সফলতা দেখিয়েছে। আমাদের মতো দেশের পার্শ্ববর্তী বৃহৎ দেশের সঙ্গে শত্রুতা মানায় না। কিন্তু অতীতে সেটি করা হয়েছে। এ কাজটি করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তারা অশুভ শক্তিকে লালন করেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বিগত চার বছরে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে উল্লেখ করে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠাই হবে আগামী এক বছরে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ। অতীতের ভুল শুধরে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে সরকার জনগণের মন জয় করতে পারবে। সরকারের প্রতি মানুষের এই আস্থাও আছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবগুলো অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোথাও সরকারের পক্ষ থেকে প্রভাব বিস্তার করা হয়নি। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হেরেছেন। সরকার পরাজয় মেনে নিয়েছে। অতীতে কিন্তু এমন দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারেনি। সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে।
সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য হলো সমুদ্র বিজয়। দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ ব্লক শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের হস্তগত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ বিশাল সমুদ্রসীমার অধিকারী হলো। একই সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে বিরোধ মেটানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকার ঢাকা শহরের যানজট নিরসন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করেছে। এই কাজ অনেকটা সময়সাপেক্ষ। ইতিমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু কাজ চলছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা শহরের চেহারা বদলে যাবে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হওয়া ও ঘাতকদের ফাঁসি কার্যকর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর কথা উল্লেখ করে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার অনেক কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও শাস্তি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এই বিচার দেশের মানুষের প্রাণের দাবি। এ বিচার কাজ সম্পন্ন করতে যা করার সরকার তার সবই করবে। এক্ষেত্রে দেশবাসীরও সহযোগিতা প্রয়োজন।

 

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর