ঘটনাবহুল ২০১২ সালে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের দুই বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের নাম উঠে আসে।
মন্ত্রিত্ব নেওয়ার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখান করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক তোফায়েল আহমেদ ও বামপন্থি নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অতীতের নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আবার নতুন করে আলোচনায় স্থান করে নেন তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন।
মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য ১২ সেপ্টম্বর তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। নতুন মন্ত্রী হিসেবে বিকেলে শপথ নেয়ার জন্য তাদের বলা হলেও তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তাদের এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য করা হয়।
এর আগে গত বছর ২৮ নভেম্বর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তাদের সঙ্গে তোফায়েল আহমেদকেও মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। এমন কি শপথের তালিকায়ও তার নাম ছিলো। কিন্তু তখনও তিনি রাজি হননি।
মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য বুধবার তোফায়েল আহমদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মুজিবুল হক, ওমর ফারুক ও আব্দুল হাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কিন্তু সাবেক শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ পুনরায় মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব নাকচ করেন। তিনি শপথ নিচ্ছেন না বলে বৃহস্পতিবার সকালেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন।
এদিকে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ফোন করে রাশেদ খান মেননকে ১৩ সেপ্টেম্বর শপথ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তখন মেনন পার্টি ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানিয়ে দেন।
১৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর মন্ত্রিত্ব না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে রাশেদ খান মেনন তখন সাংবাদিকদের জানান, পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভায় যোগদানের অবকাশ নেই।
এদিকে তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেনন মন্ত্রিত্ব প্রত্যাখানের পর দেশের রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে ঘুরে ঘুরে ফিরে তাদের নাম উচ্চারিত হয়। প্রত্যেকের মন্তব্যের মূল কথা ছিলো, তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক, কি নেতিবাচক হয়েছে তা বিশ্লেষণের আগে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও তারা সেটা লুফে নেননি এটাই বড় কথা।
দুর্নীতির দায়ভার নিয়েও যেখানে কেউ মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চান না সেখানে দল ও জোটের মধ্য থেকে মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন তারা।