বর্তমান সরকারের সৃষ্ট সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আরও বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সাফল্যে আপনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। এ জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ও রপ্তানি আরও বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। গতকাল শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৩ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তরা বিশ্বে প্রতিযোগিতার সামর্থ অর্জন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে শুল্ক ও কর দিয়ে সরকার পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, একই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম, মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান সুভাশীষ বোস অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রপ্তানি বাড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্ব দিতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের নতুন পণ্য, নতুন বাজার ও নতুন দেশ খুঁজে বের করতে হবে এবং এজন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বরাবরই ব্যবসাবান্ধব। এ সরকার ব্যবসায়ীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় না, বরং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে সহযোগিতা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দু’টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন এবং একটি সময়োপযোগী উদ্যোক্তাবান্ধব শিল্প নীতি প্রণয়ন করেছে। ২০টি খাতকে থার্স্ট সেক্টর হিসেবে চিহ্নিত করে এসব খাতে বিনিয়োগে বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে।
বর্তমান সরকার সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে সাতটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলশ্রুতিতে বিগত চার বছরে বাংলাদেশে ৩৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রপ্তানিতে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চার বছরে এ প্রবৃদ্ধি ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। আরও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও নতুন উত্তোলন কূপ খনন করা হয়েছে। এ সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ব্লক টেন্ডার দেয়ার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় গড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ দেশ। পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি-ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈশ্বিক যোগাযোগ সামর্থ্য সূচকেও বাংলাদেশ ছয় ধাপ এগিয়েছে।’
বাণিজ্য মেলার সাফল্য কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বাণিজ্য মেলা এক সফল বাণিজ্য প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে এবং প্রতি বছর এর গুরুত্ব বাড়ছে। পরে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন এবং এর বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন ঘুরে ঘুরে দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো মাসব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে। এ বছর ১২টি দেশের ৩০ টি কোম্পানি মেলায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে নতুন দেশ হচ্ছে জাপান ও সিঙ্গাপুর। দেশী-বিদেশী পণ্যে মেলায় ৩৬২ স্টল সজ্জিত রয়েছে। এতে রয়েছে ৯০টি প্যাভেলিয়ন ও ৪২টি মিনি প্যাভেলিয়ন। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মেলায় প্রবেশ মূল্য হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক ২০টাকা ও শিশু ১০ টাকা।