সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব এরশাদের

সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব এরশাদের

রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, ব্যারাকে ফিরে যেতে চাইলেও পারিনি। ১৯৮৪-তে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও কোন দল নির্বাচনে আসতে রাজি হয়নি। আমার কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্নই ছিল না। রাজনৈতিক দলগুলো সে সময় নির্বাচনে এলে আমার দল গঠন করার কোন প্রয়োজন ছিল না। সামরিক শাসনও আরও দু’বছর প্রলম্বিত হতো না। ওই সময়ে রাজনৈতিক দলসমূহের ভুলের কারণে সামরিক শাসন দীর্ঘায়িত হয়েছে। রাজধানীর বিজয়নগরে ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পার্টি আয়োজিত সমাবেশে এরশাদ এসব কথা বলেন। র‌্যালি-পূর্ব প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ সমাবেশে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাও দেন জাপা প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, স্বচ্ছ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা এবং ফর্মুলা আমাদেরই বের করতে হবে। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের সময় সকল দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে স্বল্প পরিসরে একটি সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, সে সরকারের দায়িত্ব থাকবে শুধু রাষ্ট্রের রুটিন কাজ পরিচালনা করা। নির্বাচনের সার্বিক দায়িত্ব থাকবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের হাতে। তার জন্য সর্বসম্মত একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। নির্বাচনের ব্যাপারে সব ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনে অর্পণ করতে হবে। নিজের ক্ষমতা হস্তান্তরকালীনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার কাছে টাকার বস্তা, সোনার খনি পাওয়া যায়নি। ওই সময়ও বলেছিলাম দেশের বাইরে আমার কোন টাকা-পয়সা নেই। এখনও বলছি দেশের বাইরে যদি আমার একটি ডলারও পাওয়া যায় তবে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেবো। তিনি বলেন, এখন ঘুষ নেয়ার পর ঘুষের টাকা-গাড়ি ফেরত দিতে হচ্ছে। একের পর এক দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি হচ্ছে। তারপরও সেই কালো বিড়ালদের বিচার হয়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি ও দরজি দোকানি বিশ্বজিতের স্মৃতিতে রাজধানীতে চত্বর নির্মাণের দাবি করে এরশাদ বলেন, অনেকের নামেই চত্বর হয়। কিন্তু বিশ্বজিতকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, সারের জন্য কৃষককে প্রাণ দিতে হলো। এদের জন্য কিছুই করা হলো না। তিনি বলেন, যদি চত্বর করতে হয় তাহলে সাগর রুনি এবং বিশ্বজিতের জন্য চত্বর করতে হবে। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, সরকারে গিয়ে আমরা দলের আগামী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবো। সে সময়ের জন্য আপনারা প্রস্তুত হোন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের শক্তি ও সাহস নিয়ে আমরা সরকার গঠন করবোই। যারা জাতীয় পার্টির সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি আজ অনেক বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। জাতীয় পার্টি আছে কিনা দেখে যান। আমার পার্টি আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। জাতীয় পার্টি ছাড়া মানুষের মুক্তি সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এরশাদ বলেন, দেশের মানুষ দুই নেত্রীকে আর ক্ষমতায় চায় না। খুন-গুম-হত্যা ছাড়া তারা কিছুই দিতে পারেনি। এ সরকার কি উপহার দিল? এর উত্তরে বলা যায়- কিছু্‌ই না। ব্যাংকের অবস্থা খারাপ, বিনিয়োগ নেই। জানমালের নিরাপত্তা নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। আপনারা আমার পাশে দাঁড়ান আমি নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবো।
জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, শান্তির পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সমাবেশ দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে একপর্যায়ে জনসমাবেশে পরিণত হয়। সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা বড় বড় মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে শোডাউন করেন। বিজয়নগর এলাকা এরশাদ ও নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। সমাবেশ চলাকালে পল্টন-বিজয়নগর এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেলে অত্র এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। সমাবেশের পরপরই এরশাদের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা বাদ্য-বাজনা ও হাতি ঘোড়া নিয়ে বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে। র‌্যালিটি রাজধানীর পল্টন, জিপিও-গুলিস্তান-রাজউক-দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিকালে জাতীয় পার্টি রাজধানীর বনানী মাঠে এক আলোচনা ও মনোজ্ঞ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এসব কর্মসূচিতেও দলের চেয়ারম্যান এরশাদসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী এমপি, দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, এডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, মোস্তফা জামাল হায়দার, গোলাম হাবিব দুলাল, এডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, সৈয়দ আবদুল মান্নান, মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, এস এম এম আলম আহসান হাবিব লিংকন, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সুনীল শুভ রায়, ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, রিন্টু আনোয়ার, এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মাহজাবীন মোরশেদ, এইচ এন এম শফিকুর রহমান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, সাহিদুর রহমান টেপা, সৈয়দ মিজানুর রহমান হিমু, কাজী আবুল কাসেম রিপন প্রমুখ।

 

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর