রেমিটেন্স ১৪শ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

রেমিটেন্স ১৪শ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

বিদায়ী ২০১২ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৪২০ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, দেশের ইতিহাসে এই পরিমাণ রেমিটেন্স এক বছরে আগে আর আসেনি।

চলতি বছর শুরু থেকে রেমিটেন্সে উর্ধ্বগতি থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা ছিল, বছর শেষে এর পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার স্পর্শ করবে। তবে বছর শেষে তা ওই অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালে ১৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। ২০১১ সালে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ১১ বিলিয়ন (১ হাজার ২১১ কোটি) ডলার।

এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০১১ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ শতাংশ। ২০১০ সালে রেমিটেন্স বেড়েছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিদায়ী বছরের অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে। ওই মাসে ১৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার দেশে পাঠান প্রবাসীরা। এক মাসে এত রেমিটেন্স আগে কখনো আসেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১২ সালের প্রতি মাসেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে।এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।”

তিনি জানান, ২০১১ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৯৬৩ কোটি ডলার। ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে তা ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২শ ৭৫ কোটি ডলার। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ৩২ ভাগ।

সাইদুর রহমান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ এই অতি উচ্চতায় পৌঁছেছে।”

তবে রপ্তানি আয় ও প্রকল্প সাহায্য বৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয় হ্রাস রেকর্ড রিজার্ভের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে বলেও জানান তিনি।

“রেমিটেন্স বাড়ায় এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকা ২ দশমিক ৬ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে,” বলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৪৮ পয়সা। মঙ্গলবার তা কমে ৭৯ টাকা ৭৫ পয়সায় নেমে এসেছে।

‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ২০১২ সালকে রেমিটেন্সের বছর’ অভিহিত করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১২ সালের অর্থনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক। তবে সবচেয়ে ভালো রেমিটেন্স।

“এই রেমিটেন্সই অামাদের অর্থনীতির ভিতকে মজবুত অবস্থায় রেখেছে।”

এদিকে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় ৩০ কোটি ডলার কিনেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ১২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

এরপর ১০ ডিসেম্বর তা আবার ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। বছরের শেষ দিনে তা বেড়ে ১২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে।

বর্তমানের মজুদ ডলার দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে সাইদুর রহমান জানান।

জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সুবিধার দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

আর জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ গত বছরের একই সময়ে এই ব্যয় ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছিল।

আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম মাসের হিসাবে (জুলাই-নভেম্বর) বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

এ সময়ে ৯৫ কোটি ডলারের মতো ছাড় করেছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা। গত বছরের এ সময়ে এসেছিল ৪৫ কোটি ডলারের মতো।।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ খবর