দেশ, সম্পদ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে এবার সিলেট থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল বিকালে সিলেটের সিটি পয়েন্টে জাতীয় ঐক্যের ডাকের আহ্বানে বিশাল সমাবেশে দুই নেতা এই ঐক্যের ডাক দেন। এ সময় তারা বলেন, ‘পুণ্যভূমি সিলেট থেকে আবার ঐক্যের ডাক দিলাম। এ সরকারের পতন চাই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। নাটকীয় কোন নির্বাচন মানবো না।’ এ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে দুই নেতাই বলেন, ‘নির্দলীয় যে কোন ফর্মুলাই নির্বাচন হোক, নিরপেক্ষ হতে হবে। দেশের মালিক জনগণকে তাদের নিরপেক্ষ রায় প্রদানের সুযোগ দিতে হবে।’ জাতীয় ঐক্যর ডাকে এ সমাবেশের আগের অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন সিলেটে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ার করেন। এবং এ মাজার জিয়ারতের মধ্যে তারা সিলেট থেকে দুর্বার গতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাকের যাত্রা শুরু করেছেন বলে জানান। এ সময় তারা বলেন, ‘সিলেট থেকে যাত্রা শুরু করলে এ যাত্রা বিফলে যায় না। সফলতা আসে। জাতীয় ঐক্যের ডাকের এ যাত্রাও সফল হবে।’ দুই নেতা বলেন, ‘আমরা কিছু চাই না। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনারা জেগে উঠুন। দেশ বিক্রি বাঁচাতে আপনারা এক বার সুযোগ দিন। সকল অন্যায় ও অবিচারের বিচার করবো।’ বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে দুই নেতা ছাড়াও গণফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এডভোকেট শাহ আহমদ বাদল, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী কামাল আহমদ, শান্তিপদ ঘোষসহ সিলেটের সিনিয়র নেতারা। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন রাষ্ট্র ছিনতাই হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে বলেন, জনগণের কাছে রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, সংগঠিত হলে কিভাবে জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা যায় তা সিলেটবাসী দেখিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে হরিপুরের সম্পদ বিদেশীদের কাছে তুলে দিতে পারেনি সাবেক স্বৈরাচার সরকার। গণ-তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে তা ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। তিনি টেংরাটিলা সম্পর্কে সিলেটবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, টেংরাটিলার ৭০০ কোটি টাকার মামলার গোপন সমঝোতার চেষ্টা চলছে। সতর্ক হোন। গণ-তদন্ত কমিশন গঠন করুন। আর দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। মহাজোট গঠনের অতীতের কথা তুলে ধরে ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০০৫ সালে আমরা ঐক্য মঞ্চ গঠন করেছিলাম। মাঝপথে এসে আওয়ামী লীগ ঢুকে গেল। এরপর হলো ১৪ দল। এ ১৪ দল আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক সফলতা পেয়েছে। কিন্তু মহামানব এরশাদকে জোটে ঢুকিয়ে মহাজোট গঠন করা হয়েছে। মহামানব দলে ঢোকায় আমরা মহাজোটে থাকেনি। বেরিয়ে এসেছি। তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, দুর্নীতি দিয়ে দেশের ভবিস্যৎ ধ্বংস করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নজিরবিহীনভাবে লুটপাট করা হচ্ছে। হলমার্ক ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। শেয়ারবাজার নিয়ে সরকার নিষ্ক্রিয়। যারা টাকা মেরেছিল তারা টাকা ঋণ খেলাপি থেকে বেঁচে ডান-বামে সম্পদ গড়েছে। তিনি বলেন, নাটকীয় কোন নির্বাচন আমরা মানব না। দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতায় থেকে জনগণের সম্পদ নিয়ে খেলবে তা মানব না। প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব। দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হলে আমরা মানব না, দেশের জনগণও তা মানবে না। প্রয়োজন হলে আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ করব। এরপরও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নামে ভাঁওতাবাজি মানা হবে না। সমাবেশে ভাষণদানকালে বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, এ দেশের মালিক-মোক্তার জনগণ। অথচ মানুষ মরছে, লুটপাট হচ্ছে, দেশ রসাতলে চলে যাচ্ছে জনগণ কিছু বলছে না। তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, একবার জেগে উঠুন, দেখবেন পরিবর্তন হয়ে গেছে। দেশ কোথায় আছে প্রশ্ন করে তিনি বলেন, নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াসের শিশুকন্যাকে জিজ্ঞেস করুন, কিংবা বিশ্বজিতের মাকে জিজ্ঞেস করুন। তাদের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে দেশ কোথায় চলে গেছে। দেশের সম্পদ, মানুষ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বি. চৌধুরী বলেন, একে অন্যকে ঐক্যর ডাক দেন। অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার হয়ে উঠুন। কেউ আপনাদের রুখতে পারবে না। তিনি বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। হতে দেয়া হবে না। যে কোন নির্দলীয় ফর্মে নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে না। তিনি সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, মন্ত্রীরা এখন জুতা খাচ্ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে বর্তমান সরকারের অবস্থান কোথায়।