গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছরও অধিকহারে হলুদের আবাদ করেছিলেন পাবনার কৃষকরা।ধান, পাট ও অন্যান্য ফসলে লোকসান দেওয়ায় হলুদের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন তারা।
কিন্তু হাটবাজারে চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে মণ প্রতি হলুদের দাম ২ থেকে ৩ হাজার টাকা কমে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন জেলার হলুদচাষীরা।
জেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এ বছর জেলার ১ হাজার ৪৪২ হেক্টর জমিতে হলুদ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার আবাদ হয়েছিলো ১ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে।উৎপাদিত হলুদ শুকানোর পরে প্রতি হেক্টর থেকে সাড়ে তিন মেট্রিক টন হলুদ পাওয়া যায়।
সেই হিসেবে এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মে. টন শুকনো হলুদ পাওয়ার আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জেলা সদরের বাইরে আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগরসহ ৯টি উপজেলাতেই কম-বেশি হলুদের আবাদ হয়।তবে সবচেয়ে বেশি হলুদ আবাদ হয় ঈশ্বরদী, পাবনা সদর ও সাঁথিয়া উপজেলায়।
তিনি জানান, এসব অঞ্চলের কৃষকরা আড়ানী, সিন্দুরী ও ডিমলা জাতীয় হলুদের আবাদ করেছেন।
সদর উপজেলার মালিগাছা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বাংলানিউজকে জানান, বীজ বপনের পর মাঠ থেকে হলুদ সংগ্রহ করতে তাদের সময় লাগে ৮ থেকে ৯ মাসের মতো।প্রতি হেক্টর জমি থেকে তারা গড়ে ১৭ মেট্রিক টন পর্যন্ত কাঁচা হলুদ সংগ্রহ করছেন।
শাহজাহান আলী আরও জানান, প্রতি বিঘা হলুদ আবাদে খরচ পড়ে কমবেশি ৩০ হাজার টাকা।গত বছর বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতি মণ শুকনো হলুদ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছর হলুদের দাম কমে গেছে মণ প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।এ হিসেবে গত বছরের তুলনায় প্রতিমণ হলুদে কমবেশি ২ হাজার টাকা করে লোকসান গুণছি।
ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া হাটের হলুদের ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত প্রতি মণ হলুদ কিনছি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা দরে।গত বছরে কিনেছিলাম কমবেশি ৮ হাজার টাকা দরে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পাবনার হলুদের স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে।পাবনার কাঁচা ও শুকনো উভয় ধরনের হলুদ পাবনা থেকে চলে যায় ঢাকা, কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
হলুদ আবাদে পুরুষদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন। আবাদ ও তোলার সময় পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা হলুদ সেদ্ধ করে শুকোনোর কাজ করেন।এসময় পুরুষ শ্রমিকরা পান ২৫০ টাকা।আর নারী শ্রমিকরা দিন শেষে পারিশ্রমিক পান ২০০ টাকা।
হলুদ চাষিরা নিজের জমিতে ও অন্যের জমি লিজ নিয়ে হলুদের আবাদ করে থাকেন।
সদর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের জমি লিজ নিয়ে হলুদ আবাদ করা কৃষক আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছর আমি নিজের জমির বাইরে আরও৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে হলুদ আবাদ করেছি।প্রতি দেড় বিঘা এক মৌসুমের জন্য ২৩ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছি।এর সঙ্গে বীজ, সার, ঘেরা দেয়া ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, গত মৌসুমে আড়তদার ও ফড়িয়ারা মৌসুমের শুরুতেই জমি থেকে কাঁচা হলুদ ২ হাজার ২শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে কিনলেও লোকসানের আশংকায় এবার কোনো আড়তদাররা মাঠ থেকে হলুদ কিনছেন না।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বাংলানিউজকে জানান, গত মৌসুমে হলুদের বাম্পার ফলন হলেও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমার থেকে নীম্নমানের হলুদ দেশে এনে অনেক কম দামে বিক্রি করেছিলো।এরপর থেকে হলুদ ব্যবসায় ধ্বস নামে।
দেশে হলুদের বাম্পার ফলনের পর বিদেশ থেকে নীম্নমানের হলুদ আমদানি না করা হলে এবং হলুদ সংরক্ষণের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হলে পাবনার হলুদ ব্যবসায়ীরা আবার উঠে দাঁড়াতে পারবেন। তা না হলে অব্যাহত লোকসানের মুখে হলুদ চাষিরা বিকল্প আবাদের দিকে ঝুঁকে যেতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।