নারায়ণগঞ্জে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি একটি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
এসব ঘটনায় প্রায় ক্ষেত্রেই কোনো মামলা হয় না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। কাউকে গ্রেপ্তার বা কোনো ট্রান্সফরমার উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
একবার ট্রান্সফরমার চুরি হলে নতুন একটি সংযোজন করার মধ্যবর্তী সময়ে গ্রাহকদের পোহাতে হয় ভোগান্তি। এছাড়া নতুন ট্রান্সফরমারের জন্য ঘুষ দিতে হয় বলেও লাকাবাসী অভিযোগ করেন।
গত অগাস্টে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে ট্রান্সফরমার চুরির অভিযোগে এলাকাবাসীর পিটুনিতে দুই জন নিহত হয়।
অনেক এলাকায় রাতে পাহারা দিয়েও ট্রান্সফরমার রক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার সেচ মৌসুমে কৃষকরা জমিতে ব্যস্ত থাকায় পাহারা দিতে পারে না। এ সময় চুরি বেড়ে যায় বলে এলাকাবাসী জানায়।
এলাকাবাসী, পল্লী বিদ্যুৎ ও ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ লিমিটেড (ডিপিডিসি) জানায়, গত তিন বছরে জেলায় শতাধিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। একেকটি ট্রান্সফরমারের মূল্য পাঁচ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
একবার ট্রান্সফরমারের চুরি হলে পুরো এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এরপর দেনদরবার করে আরেকটি বসাতে লেগে যায় অন্তত ৩/৪ দিন।
একেকটি ট্রান্সফরমার পুনরায় বসাতে এলাকাবাসীকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা ডিপিডিসিকে/পল্লী বিদ্যুৎকে দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শহরের বাবুরাইল এলাকার বাসিন্দা আবুল সায়েম ও জিসান আহম্মেদের প্রশ্ন, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় কিভাবে চোরের দল ট্রান্সফরমার চুরি করে নিয়ে যায়? রাতে পুলিশের টহল থাকার পরও ট্রান্সফরমার চুরির বিষয়টি রহস্যজনক।
এসব চুরির ঘটনার সঙ্গে ডিপিডিসির লোকজনই জড়িত। তারা ট্রান্সফরমার চুরি করে। আবার এলাকাবাসীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ট্রান্সফরমার লাগিয়ে যাচ্ছে, বলেন তারা।
নগরীর জালকুড়ি এলাকার আকবর আলী ও এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাতে ট্রান্সফরমার খুলে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন দুই চোরকে ধরে পিটুনি দিলে তারা মারা যায়।
তিনি বলেন, “অনেক সময় ডিপিডিসির লোকজন এই চুরির দায় এলাকার লোকজনের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে।”
ডিপিডিসি নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের উপ-মহাব্যবস্থাপক (কারিগরী) একরামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চুরিরোধে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ট্রান্সফরমারে নাট-বল্টুর পাশাপাশি ঝালাইও দেয়া হয়। কিন্তু তার পরও চুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
“এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা শহরে মাইকিং এবং ডিপিডিসির নিরাপত্তা টহল দল রেখেও চুরি বন্ধ করতে পারছি না।”
তিনি বলেন, মেরামতের নামে যাতে কেউ চুরি করতে না পারে তার জন্য মাইকিং করে গ্রাহকদের সচেতন করা হয়। বলা হয়, রাতে ট্রান্সফরমারে কোনো কাজ করা হয় না।
ট্রান্সফরমার চুরির সঙ্গে ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের কিছু কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
আড়াইহাজার পল্লী বিদ্যুতের গোপালদী জোনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হযরত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত এক বছরে এ জোনের ছয়টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। জোনটি হয়েছে এক বছর আগে। এর আগে ছিল সদর জোনের অন্তর্ভুক্ত।
পুলিশ সুপার শেখ নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রান্সফরমারটি মূল্যবান হওয়ায় চুরি ঘটনা বেড়েছে। ট্রান্সফরমারের ভেতওে থাকা তামার দাম বেশি হওয়ায় চুরির ঘটনা ঘটছে।
এসব চুরির ঘটনায় ডিপিডিসি ও পল্লী বিদ্যুতের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি আরো বলেন, চুরির ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা হয় না। ডিপিডিসি বা পল্লী বিদ্যুৎ কখনো করলেও তারা পুলিশকে সহায়তা করে না। এ কারণে সংঘবদ্ধ চক্রটিকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না।