নয়া দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, ভারতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালানো হবে।
গত ১৬ ডিসেম্বর চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান ২৩ বছরের ওই তরুণী।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, তার মৃত্যুর খবরে ভারতজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। এই নৃশংস ঘটনা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সমাজের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে প্রবল নাড়া দিয়েছে।
তার এই মৃত্যুকে ‘বীরের মৃত্যু’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। ধর্ষকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অঙ্গীকার ব্যক্তও করেন তিনি।
ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের অঙ্গীকার।
সোনিয়া বলেন, “আমাদের দেশের সব নারীকে সুরক্ষা দিতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের পূর্ণ শক্তি এবং আইন ও প্রশাসনের শক্তি দিয়ে লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত আমাদের।”
তিনি আরো বলেন, “ওই তরুণীর লড়াই বৃথা যাবে না।”
এই গণধর্ষণের জন্য দায়ীদের দ্রুত ও যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করারও আশ্বাস দেন তিনি।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের লড়াইকে জোরদার করার কথা বলেছেন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা অরুন জেটলিও।
“আজ আমাদের সবার মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে যে, বর্বর ও পাশবিকতার শিকার হয়ে জীবন দিল একজন তরুণী। এমন একটি পরিবেশে সে প্রাণ দিল যেখানে নারীরা নিরাপদ নয়।
“আমাদের এখন অবশ্যই নজর দিতে হবে কিভাবে আইন আরো কঠোর ও বিচার নিশ্চিত করা যায় এবং মর্যাদা নিয়ে নারীর বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরিতে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে।”
এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার সিন্ধ বলেন, “অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে ওই তরুণীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।”
তাছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন কঠোর করার পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এই মৃত্যুতে গায়িকা লতা মুঙ্গেশকারও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।
“যথেষ্ট হয়েছে।এটা শুধু দামিনির মৃত্যু নয়, আমাদের দেশের মানবতার মৃত্যু। এখন সময় হয়েছে ঘুম থেকে সরকারের জেগে ওঠার এবং এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের পিছনে যারা ছিল তাদের শাস্তি দেয়ার,” বলেন তিনি।
দিল্লির ওই তরুণীর মৃত্যুতে ভারতবাসীকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে অভিনেত্রী শাবানা আজমী বলেন, “এখন আমাদের অবশ্যই বিবেকের সন্ধান করতে হবে।”
সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তরুণীর মৃত্যুর পরপর এনডিটিভিকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী বলেন, “এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। আমি মনে করি এই বর্বর ঘটনা ভারতের জন্য একটি ‘জেগে উঠার’ আহ্বান হিসাবে কাজ করবে।”
সেইসঙ্গে শাবানা এই পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ উপায়ে জানানোর জন্য জনগণের প্রতি আহাবান জানান।
ওই তরুণীর মৃত্যু হলেও ভারতবাসীর হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।
“আমানত, দামিনি এখন শুধু একটি নাম। তার দেহ চলে গেছে কিন্তু তার আত্মা চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে,” বলেন তিনি।
নারীর প্রতি এই নির্যাতনের প্রতিবাদে সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়ে চিত্রপরিচালক মহেশ ভাট বলেন, “যে সব মন্দিরে নারী মূর্তিকে পূঁজা দেয়া হয় সেগুলো সব বন্ধ করে দাও।কাঁদো ভারত! তোমার নিজের মেয়ের রক্তে ভিজেছে তোমার হাত। নারীর নীরবতা তোমাদের রক্ষা করেনি। কথা বলো অথবা চিরদিনের জন্য চুপ হয়ে যাও।”