উত্তাল দিল্লি, তিহার জেলে ধর্ষককে পেটালো কয়েদিরা

উত্তাল দিল্লি, তিহার জেলে ধর্ষককে পেটালো কয়েদিরা

জেলে গিয়েও জনরোষ থেকে মুক্তি মেলেনি দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের হোতা রাম সিংয়ের। গতকাল জেলের ভেতরেই অন্য দুই কয়েদি তাকে বেদম মারপিট করেছে। তাকে বাধ্য করেছে মানুষের বর্জ্য ভক্ষণে। দিল্লিজুড়ে উত্তাল হয়ে ওঠা প্রতিবাদের ঢেউ তিহার জেলেও লেগেছে। সেখানে আটক অন্য বন্দিদের বিবেককেও নাড়া দিয়েছে ওই ঘটনা। তাই তারা ক্ষোভের বশে রাম সিংকে ইচ্ছামতো ধোলাই দিয়েছে। ওদিকে রাজধানী নয়া দিল্লি গতকালও ছিল উত্তপ্ত। তবে নিরাপত্তা
রক্ষীরা দিল্লিকে সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত করে। বিক্ষোভকারীদের যন্তরমন্তরে সমবেত হতে বাধ্য করে তারা। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সব নারীকে নিরাপত্তা দেয়ার সম্ভাব্য সব চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল স্বল্প সময়ের জন্য টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, আমিও তিন কন্যা সন্তানের জনক। আপনাদের মতো আমিও এ বেদনা বুঝি। আমার স্ত্রী, আমার পরিবার ও আমি নারকীয় ওই ধর্ষণের ঘটনায় আপনাদের উদ্বেগের সঙ্গে একাত্ম। সরকার ধর্ষিতার চিকিৎসার বিষয়ে অব্যাহতভাবে নজরদারি করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লি ফিরে এসেছেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর তেজিন্দর খান্না। ফিরেই তিনি পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা ও বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠনের সঙ্গে রাজধানীতে নারীদের নিরাপত্তা উন্নত করার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পুলিশের দুই এসিপি মোহন সিং দাবাস (ট্রাফিক) ও ইয়াগ্রাম (পিসিআর)-কে বরখাস্ত করা হয়েছে। ডিসিপি প্রেমনাথ ও পিসিআর সাতবীর কাতারিয়ার কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা দাবি করতে পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লিতে চলন্ত বাসের ভিতর ২৩ বছর বয়সী এক প্যারামেডিক পড়া ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ৬ দুর্বৃত্ত। তারপর তাকে বাস থেকে ফেলে দেয়। তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে সফদারগঞ্জ হাসপাতালে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ রাজপথ কাঁপিয়ে তুলছে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। এ বিষয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অবিলম্বের পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দেকে নির্দেশ দিয়েছেন। আটক করা হয়েছে ঘটনায় জড়িত চার জনকে। তারা অপরাধ স্বীকার করেছে। কেউ কেউ এজন্য নিজেকে ফাঁসি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিচারপতির কাছে। ওদিকে দ্রুত ধর্ষকদের বিচার দাবিকে নয়া দিল্লিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। রোববার ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিলে বিক্ষোভে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে, জলকামান ব্যবহার করেছে। ১৪৪ ধারা জারি করেও বিক্ষোভ দমাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। গতকাল ফের বিক্ষুব্ধ জনতা নেমে পড়ে রাস্তায়। তবে আগের দিনের মতো এদিন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়নি। পুলিশ তাদের যন্তরমন্তরে সমাবেশ করার আহ্বান জানালে তারা সেখানে গিয়ে সমবেত হয়। এ সময় পুলিশ ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিল যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেয়। বন্ধ রাখা হয় ৯টি মেট্রো স্টেশন। দু’দিক থেকেই রফি মার্গ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। বন্ধ করে দেয় অশোক রোড, কোপার্নিকাস মার্গ ও অন্যান্য রোড। এর ফলে সকালে কাজে বেরিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। যারা কৃষি ভবন, শাস্ত্রী ভবন, রেল ভবন ও নির্মাণ ভবনের উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন তাদেরকে রাজপথ ক্রস করতে দেয়া হয়নি। বাসগুলোর রুট পাল্টে অনেক ঘুরপথে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রফি মার্গ, রাইসিনা রোড, সাউথ ব্লক ও নর্থ ব্লকে সৃষ্টি করা হয় ভারি ব্যারিকেড। দুর্ভোগে পড়ে সাউথ দিল্লি থেকে কনট প্যালেসে যাওয়া মানুষও। এমনকি সাংবাদিকদেরও গতকাল ইন্ডিয়া গেট, রাইসিনা হিলে যেতে দেয়া হয়নি। তাদের প্রগতি ময়দানে যেতে বলা হয়। সকালে দিল্লির কেন্দ্রীয় অংশে মেট্রো স্টেশনগুলোতে সৃষ্টি হয় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। হাজার হাজার মানুষ সকালেই হাজির হয় ওই স্টেশনগুলোতে। কিন্তু আগে থেকে তা বন্ধ থাকার ঘোষণা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত স্টেশন রাজীব চক। প্রতিদিন এই স্টেশন দিয়ে ৫ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। গতকাল এ স্টেশন বন্ধ থাকায় লক্ষ মানুষের চাপ পড়ে সেখানে। ওদিকে রাতে বেসরকারি বাসে নারীদের না চড়ার পরামর্শ দিয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের কংগ্রেসের নেতা বৎস সত্যনারায়ণ।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক শীর্ষ খবর