হলমার্কের ঋণ জালিয়াতির তথ্য ধাপাচাপা দেবার বিনিময়ে রিমান্ডে থাকা সোনালী ব্যাংকের দুই উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) হলমার্কের কর্ণধার তানভীর মাহমুদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মীর মহিদুর রহমান (ওএসডি) ও সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাব হোসেন ও সফিজউদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়।
সোমবার তাদের আদালতে এনে দু’টি মামলায় তাদের ৭ দিন করে ১৪ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় দুদক।
শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম মোস্তাফিজুর রহমান একটি মামলায় ৬ দিন করে দুটি মামলায় (মামলা নং ১০ ও ১৩) ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সোমবার রিমান্ড শুরু হওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী সাংবাদিকদের বলেন, “ এলসি এবং আইবিপি (ইনল্যান্ড পার্সেজ বিল) সংক্রান্ত যে সব তথ্য-উপাত্ত হেড অফিসে পাঠানো হতো, তারা (আলতাফ ও সফিজ) এগুলো ধামাচাপা দিতেন। বিনিময়ে তারা হলমার্কের এমডি তানভীরের কাছ থেকে প্রতিমাসে মাসোহারা নিতেন।“
জিএম মীর মহিদুর সম্পর্কে তিনি বলেন, “সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা তার দায়িত্বে ছিলো। তার দায়িত্বে অবহেলার কারণেই হলমার্ক ঋণ জালিয়াতির সুযোগ পেয়েছে।“
শিবলীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
গত ৪ অক্টোবর হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ ও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও ডিজিএম (সাময়িক বরখাস্ত) একেএম আজিজুর রহমানকে আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।
২৭ জনের মধ্যে হলমার্কের সাতজন ও সোনালী ব্যাংকের ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার প্রধান আসামি তানভীর ও তুষার মিরপুর থেকে ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন। ১৪ অক্টোবর রমনা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন আজিজুর এবং ১৮ নভেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে তানভীরের স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে র্যাব ও দুদকের বিশেষ টিম গ্রেপ্তার করে।
এ চার আসামি রিমান্ড শেষে এ মুহূর্তে কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে তানভীর, তুষার ও আজিজ আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে পরিশোধিত (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই পরিশোধিত অর্থ লোপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সোনালী ব্যাংক ও হলমার্ক কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।