পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ‘দুর্নীতির’ অভিযোগকে ‘বায়বীয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এই অভিযোগ টিকবে না।”
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে ‘বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এক দর্শকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন জনপ্রশাসন বিষয়ক এ উপদেষ্টা। বিবিসি বাংলা বিভাগ এই সংলাপের আয়োজক।
সনিয়া আক্তার নামে এক দর্শক প্রশ্ন করেন, “পদ্মা সেতুর কথিত দুর্নীতির রহস্য কি জাতির সামনে কখনো উন্মোচিত হবে?”
জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, “পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট বায়বীয়।”
অভিযোগগুলো কীভাবে বায়বীয় জানতে চাইলে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন যে, এখানে (পদ্মা সেতু প্রকল্প) দুর্নীতি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, কোনো ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়নি, কোনো কন্ট্রাকটরকে বলা হয়নি যে কাজ শুরু করো কিংবা কোনো রকম এমওইউ ও সই করা হয়নি, কোনোকিছুই নয়। এজন্যই আমি বলছি বিষয়টি বায়বীয়।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে যে তদন্ত করছে তাতে এই ‘দুর্নীতির রহস্য উন্মোচিত হবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এইচ টি ইমাম।
এসময় সংলাপে উপস্থিত সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “অভিযোগ যদি বায়বীয়ই হয় তাহলে ইনভেস্টিগেট করছেন কেন?”
সংলাপে উপস্থিত বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান উপদেষ্টার এ বক্তব্য নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, “দুর্নীতির কারণেই পদ্মা সেতু হতে পারলো না। এই দুর্নীতির বিষয়টি উন্মোচিত হয়ে গেছে। জনগণের কাছে তার পারসেপশন চলে গেছে।
“এখানে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন, সচিব বা অন্য যারা প্রতিনিধি তাদেরকে আমি সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চাই না। তারা যা কিছু করেছেন তার জন্য সরকারের দায়ভার আছে। এই দায়ভার স্বীকার করে প্রেসনোটের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টা জনগণের সামনে নিয়ে আসা উচিত।”
বিশ্বজিত দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেয়াটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী কিনা এক দর্শক তা জানতে চান।
জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বলছি যে এর বিচার হবেই। বিচার হবে এজন্যই যে, সন্ত্রাসী যারা, খুনী যারা তারা কোনো দলের নয়। তারা সবসময়ই সব দলে আছে। সবসময় সুযোগ বুঝে এরা ঢুকে পড়ে, এরা সুযোগসন্ধানী। এদেরকে ছাত্রলীগ বলে, যুবলীগ বলে বা ছাত্রদল বলে চিহ্নিত না করে বলা উচিত যে এরা খুনী সন্ত্রাসী। দেশের আইন অনুযায়ীই তাদের বিচার করা হবে।”
এসময় সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, “তাহলে খুনীকে না খুঁজে প্রথমেই ছাত্রলীগ-যুবলীগ খুঁজলেন কেন?”
উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, অনেক সময় ‘মিডিয়া হাইপে’ এমন হয়ে যায়। এই বিষয়টি এরকমই হয়ে গেছে, জগাখিচুড়ির মতো।
বিএনপি নেতা নোমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি বলেছেন, ‘যেভাবে যাকে যেদিকে পারো রুখে দাঁড়াও।’
“ছাত্রলীগ-যুবলীগের নাম ধরে তাদেরকে সহিংসতার দিকে লেলিয়ে দিয়েছেন তিনি।এই সন্ত্রাসীরা সরকারের অংশ হিসাবে সরকার ও দলের দায়িত্ব পালন করেছে।”
বিশ্বজিত দাস হত্যার বিচারের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, এর সুষ্ঠু বিচার হবে না।”
সংলাপে আরো অংশ নেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্রতী’র নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মোরশিদ। সংলাপ পরিচালনা করেন বিবিসি বাংলার সাংবাদিক আকবর হোসেন।