বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই দেশের পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরো বাড়বে বলেও মত দিয়েছেন তিনি।
শনিবার থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার সৌজন্যে সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উভয়ের স্বার্থে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক আরো জোরদার করতে আমাদের বেসরকারি খাতেও একযোগে কাজ করতে হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত অর্থবছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ৮৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ সময় থাইল্যান্ড থেকে ৮৮ কোটি ডলার আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আর সেখানে রপ্তানি হয়েছে পাঁচ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পণ্য।
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘একটি আদর্শ স্থান’ হিসাবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা অবকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।
“১৫ কোটির বেশি জনগণ, সাড়ে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ একটি বিপুল ও উদ্যমী জনশক্তি এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিয়ে থাই বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান খাতে তারা বেশি বিনিয়োগ করতে পারে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে থাইল্যান্ডকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়।”
“বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, পর্যটন, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি ও নিরাপত্তার মতো খাতগুলোতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। এসব সুযোগ আমাদের কাজে লাগানো প্রয়োজন,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করছে। এ দুই অঞ্চলের সেতুবন্ধনের কারণেই দুই দেশের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সড়ক ও জলপথে যোগাযোগ বাড়লে কেবল এ দুই দেশের মানুষই নয়, পুরো অঞ্চলই লাভবান হবে।
“চিয়াং মাই ও চট্টগ্রাম রুটে বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করার পাশাপাশি ঢাকা ও ব্যাংকক ছাড়াও দুই দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গেও বিমান চলাচল চালু করা প্রয়োজন।”
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল থাকা, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তি-নিরাপত্তা নিয়ে অভিন্ন অবস্থান এবং দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্য এ দুই জাতিকে কাছাকাছি এনেছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ইংলাক সিনাওয়াত্রার উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনার এ সফরে দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আরো বিস্তৃত হবে।”
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা পৌঁছান থাই প্রধানমন্ত্রী ইংলাক। এই সফরে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পররাষ্ট্র ও কৃষি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেয়ার পর শনিবার বিকালে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন ইংলাক সিনাওয়াত্রা।
২০১১ সালে নির্বাচনে জিতে প্রথম নারী হিসাবে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন ৪৪ বছর বয়সী ইংলাক। তার ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রাও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।