তিস্তা চুক্তি আটকে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল-সীমান্ত চুক্তিটির দ্রুত বাস্তবায়ন চাইছে ভারত সরকার। এ জন্য মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমনকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলতে আগামী মাসে ঢাকায় আসছেন খুরশিদ। সালমানের আগেই আসছেন পররাষ্ট্রসচিব রঞ্জন মাথাই। আর বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি ও জঙ্গি দমন নিয়ে আলোচনার জন্য জানুয়ারির শেষে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ধের।
ছিটমহল হস্তান্তর এবং জমি আদানপ্রদানের বিষয়টিতে সব থেকে বেশি প্রাসঙ্গিক পশ্চিমবঙ্গ, তাই এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কেন্দ্র বারবার আলোচনা করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মমতার সঙ্গে সালমানের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। তাই ঢাকা সফরের আগে তিনি মমতার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় আগ্রহী।
ভারতের আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারও সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেছেন। সংসদে মমতার সঙ্গে দেখা করে অশ্বিনী বলেছেন, বাংলাদেশের সব মানুষ তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তিতে তাঁর সমর্থনের আশায় দিন গুনছে।
সালমান খুরশিদের বক্তব্য, ১১১টি ছিটমহল ভারত বাংলাদেশকে দেবে এবং ৫১টি ভারত পাবে। এ ক্ষেত্রে ছিটমহলের প্রাপ্য সংখ্যা বাংলাদেশের বেশি হলেও এই জমিগুলিতে এখন রাজ্য সরকারের কোনো মালিকানা, এমনকী প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। হস্তান্তর হলে যে ৫১টি ছিটমহলে ভারত পাবে, তার জমির পরিমাণ প্রায় ৭,১১০ একর। আর ‘অ্যাডভার্স পজেশন’-এর জমি ভারত পাবে ২৭৭৭.০৩৮ একর, পশ্চিমবঙ্গ পাবে প্রায় ২৩৯৮.০৫ একর।
১৯৪৭ সাল থেকে দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে। ১৯৫৮ সালে জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে স্থলসীমন্ত নির্ধারণের চেষ্টা বারবার হয়েছে। কিন্তু সবই অমীমাংসিত থেকে গিয়েছে। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দু’দেশের মধ্যে সই হয় সীমান্ত মীমাংসা প্রটোকল। এতদিন পর সেটিকেই চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে। সালমানের প্রশ্ন, সীমান্ত বিবাদ মীমাংসার একটি সুযোগ পাওয়া গেলে ভারত কেন সেটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে না? বিশেষত, এলাকার সাধারণ মানুষও এখন সেটি চাইছেন।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। প্রায় এক ডজন জঙ্গিকে ভারতের হাতে নিঃশব্দে তুলে দেওয়া হয়েছে। সীমান্ত সমস্যা মিটলে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ লাগোয়া অঞ্চল অনেকটাই নিরাপদ হবে। আর এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আপাতত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বোঝাতে চাইছে, তিস্তা চুক্তিতে যদি আপত্তিও থাকে, সীমান্ত চুক্তিতে যেন তারা রাজি হয়।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে তিনবিঘা করিডর দিয়ে দহগ্রাম ও আঙরাপোতা ছিটমহলের বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টা যাতাযাতের বিষয়টি অনুমোদন করে ভারত সরকার। ফলে বাংলাদেশের দীর্ঘকালের একটি দাবি পূরণ হয়। ছিটমহল দুটি পরিদর্শনও করেন শেখ হাসিনা। এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগও চালু হয়।
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য ভারতের উপর চাপ দিচ্ছে, যাতে শুধু সীমান্ত চুক্তি নয়, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারেও কেন্দ্র এখনই সিদ্ধান্ত নেয়। জোটে না থাকলেও মনমোহন সিংহ কিন্তু মমতাকে অগ্রাহ্য করে তিস্তা চুক্তি করতে রাজি নন। কারণ রাজ্যের সহযোগিতা ছাড়া কোনো চুক্তিই কার্যকর করা যাবে না।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা