কথা দিয়ে কথা রাখেননি আসিফ আকবর, বালাম ও মিলা। বছরজুড়ে এই তিন তারকা নিজেদের নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ফুলঝুরি ফুটিয়েছেন। বারবার প্রকাশ করেছেন অ্যালবাম প্রকাশের দিন-ক্ষণ। বছরের প্রথম থেকে দেয়া এমন আশ্বাসের বিপরীতে বছর শেষে ফলাফল শূন্য। একজনও প্রকাশ করতে পারেননি নিজেদের নতুন অ্যালবাম, রাখতে পারেননি কথা। উপস্থাপন করতে পারেননি কথা দিয়ে কথা না রাখার যৌক্তিক যুক্তি। এর মধ্যে আসিফ দীর্ঘ বিরতির পর নিজের নতুন এককের রেকর্ডিং শুরুর আগেই বছরের প্রথম দিকে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন অ্যালবামের নাম। ‘এক্স প্রেম’ নামের এ অ্যালবামের সুর-সংগীত করার কথা ছিল আইয়ুব বাচ্চু, হাবিব, প্রীতম, আরফিন রুমিসহ চলতি সময়ের নামকরা সংগীত পরিচালকদের। এরপর আসিফ ঘোষণা দেন প্রথমবারের মতো এ অ্যালবামটি একযোগে প্রকাশ করা হবে দেশের শতাধিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে। অথচ বছর শেষে অ্যালবাম প্রকাশ তো দূরের কথা, জানা গেছে এ অ্যালবামের একটি গানও রেকর্ড হয়নি পূর্ণাঙ্গভাবে। তাহলে কেন এমন আগাম ঘোষণা? আসিফ বলেন, ভেবেছি আবারও অডিও ইন্ডাস্ট্রির হাল ধরবো ‘এক্স প্রেম’ দিয়ে। পরে দেখলাম, না সম্ভব নয়। এই বিভাজনের গানের বাজারে আমার একার পক্ষে বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তাছাড়া এক জীবনে অডিও ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক করেছি। আরও অনেক কিছু করার চেষ্টা ছিল। অথচ এখন দেখি সবাই যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত। কেউ এই ঐতিহ্যবাহী ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ভাবছেন না। তাই আমিও নিরুৎসাহিত হলাম। ঘোষণা দিয়েও থেমে গেলাম। এদিকে চলতি বছরে আসিফের চেয়েও বেশি স্বপ্ন জাগিয়েছেন বালাম। বছরের প্রথম থেকেই প্রতিটি ঈদে এবং উৎসবে তিনি জানিয়েছেন নিজের চতুর্থ একক অ্যালবামটি প্রকাশের কথা। না, শেষতক চলতি বছরের কোনো উৎসবেই আলোর মুখ দেখলো না ‘বালাম-৪’। অথচ এ অ্যালবামটি নিয়ে বালামের নাটকীয়তার কমতি ছিল না কোন অংশে। যেমন এ অ্যালবামে তিনি নিজেই প্রথমবারের মতো গান লিখেছেন। নিজেই আবার দু’টি গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন। নিজেই বারবার বলেছেন, এবারের অ্যালবামে অনেক চমক নিয়েই আসছি শ্রোতাদের সামনে। অথচ সেই চমকে চলতি বছরে আর চমকিত হতে পারলো না বালাম প্রিয়রা। অনেকটা বালামের মতো করেই আরেক শীর্ষ তারকা মিলার ‘কথা রাখা, না রাখার গল্প’ সেজেছে বছরজুড়ে। বালামের মতো এটিও মিলার চতুর্থ একক। বালামের মতো মিলাও এবার সারা বছরে অ্যালবাম কেন্দ্রিক নানামাত্রিক চমকের গল্প বলেই চুপ থাকলেন অ্যালবামটি না প্রকাশের মধ্য দিয়ে। চমকগুলোর মধ্যে ছিল, এ অ্যালবামটির জন্য মিলা নিজ ঘরে গড়েছেন রেকর্ডিং স্টুডিও। শুধু কি তাই? এবারই প্রথম তিনি এই অ্যালবাম দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সংগীত পরিচালকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। লিখেছেন নিজের জন্য গানও। বছরের প্রথম থেকে বার বার বলেছেন, অ্যালবাম রেকর্ডিং শেষ। বড়মাপের স্পন্সরও প্রস্তুত। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও এক পায়ে দাঁড়ানো। যে কোন সময় ধুমধাম করে অ্যালবামটি প্রকাশ করে দেবো। তিনি আরও বলেছেন, এর মধ্যে নতুন কয়েকটি গানের ব্যয়বহুল মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছি। গানগুলোও দারুণ হয়েছে। আশা করি শ্রোতারা শিগগিরই আমার নতুন গানের উত্তাপ গ্রহণ করবেন। না, শেষতক সেই উত্তাপের উষ্ণতা ছুঁতে পারেনি শ্রোতাদের। মিলা ভক্তরা শেষ আড়াই বছর ধরে মিলার ‘ডিসকো বান্দর’ থেকেই ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছেন’। আর শ্রোতাদের কাছে মেগাহিট বালামের অবস্থা তো এখন ঠেকেছে তলানিতে। বছরব্যাপী কথা দিয়ে কথা না রাখার কারণ হিসেবে বালামের ভাষ্য এমন, সময় হয়নি বলেই প্রকাশ করা হয়নি। সময় হলে প্রকাশ পাবে। আর আমি আগাম কিছু বলতে চাই না। একটি সূত্র জানায়, অ্যালবাম শতভাগ প্রস্তুত থাকলেও বালামের চাহিদা মতো স্পন্সর এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অনাগ্রহের কারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে সময় পার করছেন তিনি। আর মিলা মূলত অ্যালবামের চেয়ে দেশ-বিদেশের স্টেজ শো নিয়েই চলতি বছরটা কাটিয়েছেন। কারণ, স্টেজ থেকে অনেক নগদ টাকা মিলছে মিলার! তাই অ্যালবাম নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই তার। মিলা বলেন, না, তা নয়। স্টেজে তো আমাকে অ্যালবামের গানই করতে হচ্ছে। নতুন গান না করলে পুরনো গান আর কতদিন করবো? অবশ্য এ বছরে স্টেজে আমি অপ্রকাশিত গানগুলোও করেছি অনেক। আসলে নতুন একক প্রকাশের জন্য এ বছর সময়ই পেলাম না। এটা হলো বড় সত্যি। হুটহাট করে এই অ্যালবামটি প্রকাশ করতে চাইনি আমি। তাই দেরি হয়ে গেল। এদিকে আসিফ, বালাম, মিলার পাশাপাশি এমন করে বছরজুড়ে কথা রাখেননি আরও কেউ কেউ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যান্ড সোলস তথা পার্থ বড়ুয়া। যিনি চলতি বছরের ১২-১২-১২ তারিখে সোলসের নতুন অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিলেন বছরের শুরুতেই। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি তার অভিনয় আর স্টেজ কেন্দ্রিক ব্যস্ততার কারণে।