বিপিএলের খেলোয়াড় তালিকা সদা পরিবর্তনশীল। রাজধানীর একটি হোটেলে আজ সকালে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় বিপিএলের নিলামের আগের দিনও তাই এবার ‘কারা আসছেন না’র চেয়ে খেলোয়াড় তালিকায় আর ‘কে কে যোগ হলেন’ কৌতূহলটাই বেশি থাকল।
শোনা যাচ্ছিল, ক্রিস গেইল ও মারলন স্যামুয়েলসকে দেখা যাবে না এবারের বিপিএলে। কিন্তু বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নতুন সদস্যসচিব আই এইচ মল্লিক আশা দিলেন, ‘সেমিফাইনাল ও ফাইনালে তাঁদের পাওয়া যাবে। নিলাম তালিকায় তাই মারলন স্যামুয়েলসও থাকবেন।’ শুধু স্যামুয়েলস নন, শেষ মুহূর্তে তালিকায় যোগ হয়েছে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের বড় কিছু নামও। ২৮ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ হওয়ার পর বিপিএল খেলতে পারবেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। তিলকরত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, লাসিথ মালিঙ্গাসহ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের আরও কিছু মুখও তাই দেখা যেতে পারে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে। তবে আগেরবারের মতো এবারও নেই ভারতের খেলোয়াড়েরা।
তাড়াহুড়ো করে আয়োজিত প্রথম বিপিএল অনেক কারণেই সমালোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিপিএলে চেষ্টা চলছে সেই ভুল-ত্রুটি শোধরানোর। এবারের নিলামের জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের মূল্যসীমা। গতবার যেমন বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে শহীদ আফ্রিদির দাম উঠে গিয়েছিল সাত লাখ ডলার, বাংলাদেশির মধ্যে নাসির হোসেনের দুই লাখ ডলার, এবার সে উপায় নেই। বিদেশি গোল্ডেন শ্রেণীর খেলোয়াড়দের মূল্যসীমাই হলো ৭৫ হাজার ডলার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত। বাংলাদেশি গোল্ডেন খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে সীমাটা ৪৫ থেকে ৭০ হাজার ডলার।
দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের মূল্যসীমায় বৈষম্য আছে অন্য তিন শ্রেণীতেও। বিদেশি ‘এ’ শ্রেণীর দামের সীমা ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার ডলার, দেশিদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৫০ হাজার। বিদেশি ‘বি’ শ্রেণী ৩০ থেকে ৫০ হাজার, দেশিদের ২০ থেকে ৩০ হাজার। ‘সি’ শ্রেণীতে বিদেশিদের মূল্যসীমা ১৫ থেকে ৩০ হাজার ও দেশিদের ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার। নিলামে কোনো খেলোয়াড়ের দাম মূল্যসীমা ছাড়িয়ে গেলে বাড়তি টাকার ৬০ ভাগ পাবে বিসিবি, ৩০ ভাগ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড় ও বাকি ১০ ভাগ গেম অন। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বিশ্বাস, এতে করে নিলামের আগেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর গোপন সমঝোতার সুযোগ কমে আসবে।
খেলোয়াড় কেনার জন্য প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির বাজেট সর্বোচ্চ ১২ লাখ ডলার (প্রায় ১০ কোটি টাকা) পর্যন্ত হতে পারবে। গতবারের চেয়ে দাম কমে যাওয়ায় এবারের নিলামে একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত। তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-ই হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে।
প্রথম বিপিএলের সব টাকা এখনো পাননি বাংলাদেশি ক্রিকেটারেরা। বিপিএলের সদস্যসচিব আশ্বাস দিলেন, ‘বকেয়া আদায়-সংক্রান্ত বিসিবির তিন সদস্যের কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খেলোয়াড়দের সব টাকা পরিশোধ করবে।’ খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দেওয়ার একটা নতুন নিয়মও করে দেওয়া হয়েছে এবার। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দিয়ে দিতে হবে নিলামে ওঠা মূল্যের ২৫ ভাগ। টুর্নামেন্ট চলাকালে দিতে হবে আরও ২৫ ভাগ। বাকি ৫০ ভাগ টাকা টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে শোধ করতে হবে।
এবারের বিপিএলে নতুনত্ব আছে আরও। গতবার প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি বাধ্য ছিল আইসিসির সহযোগী দেশগুলো থেকে অন্তত একজন ক্রিকেটারকে নিতে। এবার সেই বাধ্যবাধকতা নেই। গতবারের নিলামে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আটজন দেশি ও আটজন বিদেশি খেলোয়াড় নিতে পেরেছিল। পরে নিয়েছিল আরও একজন করে। এবার নিলামেই ১০ জন করে দেশি ও ১০ জন করে বিদেশি খেলোয়াড় কেনা যাবে। ঢাকার সঙ্গে গতবার চট্টগ্রামে খেলা হলেও এবার হবে খুলনায়। বাড়ছে একটা ফ্র্যাঞ্চাইজিও। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, বরিশাল বার্নার্স, চিটাগাং কিংস, খুলনা রয়েল বেঙ্গলস, সিলেট রয়্যালস ও দুরন্ত রাজশাহীর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে রংপুর রাইডার্সও।
ফ্র্যাঞ্চাইজি বেড়েছে, তবে দ্বিতীয় বিপিএলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেলেও কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনো হয়নি। বিপিএলের সদস্যসচিব অবশ্য বলেছেন, আজ থেকে শুরু হয়ে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই লিখিত চুক্তি সম্পন্ন হবে তাঁদের।
হলে ভালো। না হলে সবকিছুতেই হয়তো ফিরে আসবে প্রথম বিপিএলের ছায়া।