বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কথা ঠিক থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি এখন যা বলেন, পরে তা আবার ঘুরিয়ে ফেলেন। এক সময় তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধিতা করেছেন। বলেছেন, পাগল ও শিশু ছাড়া নিরপেক্ষ লোক পাওয়া যায় না। জেল থেকে বেরিয়েও তিনি বলেছিলেন, ‘এমন দিন আসবে যখন দেশের মানুষ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইবে না।’ কিন্তু এখন উনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান।
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। আমাদের সরকারের সময় যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে এতো ভালো নির্বাচন কখনো হয়নি।’
তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করলেন বিরোধী দলের নেত্রী। তারা বললেন, তারা এটা মানবেন না। কিন্তু নির্বাচনে যখন নিজ দল সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হলেন, তখন আর কোনো কথা নেই। বিজয়ী প্রার্থীর গলায় মালা দিয়ে কাছে টেনে নিলেন। আসলে খালেদা জিয়ার কথা ঠিক থাকে না, একেক সময় একেক কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, যার কথার ঠিক থাকে না, তিনি ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের জন্য কি করবেন? লুটপাট-দুর্নীতি আর অত্যাচার-নির্যাতন করবেন। এখন আবার আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। হুমকি দিয়ে কোনো্ লাভ হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা দেশে শুরু করা হয়।
যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে লবিং করেছিলো, যাদের নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছিলো, গ্রেফতার করে বিচার করা হচ্ছিল তাদের ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী করা হয়।
স্বাধীনতার চেতনা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নষ্ট করে দিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। একটি মানুষের ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাস চরিতার্থ করতে হাজার হাজার মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। সে সময়কালে ১৭/১৮টি ক্যু হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৭ সালের একটি ক্যুয়ে জিয়াউর রহমান বিমান বাহিনীর ১৭ জন অফিসারকে হত্যা করেছেন। এভাবে সেনাবাহিনীর মোট ৬শ’ অফিসারকে জিয়া হত্যা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তখন থেকেই এসব হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির বিরোধিতা করেছিলাম। এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আমরা যে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রায়নে বিশ্বাস করি সেটা প্রমাণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সেই দেশকে তারা আবার পিছিয়ে দিয়েছিলো। বিএনপি-জামায়াতের প্রথম তিন বছর আর আমাদের সরকারের এই তিন বছরের তুলনা করলেই পার্থক্য বোঝা যাবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত শুধু দেশকে নানা দিক থেকে পিছিয়েই দিয়ে যায়নি, নির্বাচন নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের দলীয় লোককে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানানোর ষড়যন্ত্র করতে করতে আসে ওয়ান-ইলেভেন। তখন এক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী বলেন, তিন মাস নয়, যতো দিন সময় লাগে এ্ই সরকার থাকতে পারবে। এই আইনজীবী অনেক ভালো ভালো কথা বলেন, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কু-পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্য, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব দিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এর কিছুই করতে পারেনি।’
‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার করে যাচ্ছি। কিন্তু বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। আসলে দেশের মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি নেত্রীর মনে অশান্তি থাকে। আর মানুষ অশান্তিতে থাকলে উনি ভালো থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘আগের বার আমরা ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছি। পার্বত্য সমস্যাকে আমরা বলেছিলাম এটা রাজনৈতিক সমস্যা, রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। আমরা সেভাবেই করেছি। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করেছি।’
‘বিএনপি তখন এই সব চুক্তির বিরোধিতা করেছে। এমনকি অস্ত্র সমর্পণের দিন তারা হরতাল ডেকেছিলো। তারা আসলে দেশে শান্তি চায় না, দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে রাখতে চায়।’
‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি আমরা করেছি, বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদেরই। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এ সময় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সতীশ চন্দ্র, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।