গাফ্ফার চৌধুরীর স্ত্র্রী সেলিমা আফরোজের ইন্তেকাল

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্ত্রী সেলিমা আফরোজ চৌধুরী মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না—রাজিউন)।

মঙ্গলবার লন্ডন সময় দিবাগত রাত ১০.৫০ মিনিটে কেন্দ্রীয় লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এবং তাঁর দুই মেয়ে ও ছেলে। মৃত্যুকালে সেলিমা আফরোজ তার স্বামী ছাড়াও ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

১৯৭৫ সালে গুরুতর অসুস্থ হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর  রহমানের সহায়তায় সেলিমা আফরোজ চৌধুরী স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে আসেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই ১৫ই আগষ্টের মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে স্বপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। এরপর আর দেশে ফিরে যাননি গাফ্ফার চৌধুরী-সেলিমা আফরোজ দম্পতি। ৭৫ সালে লন্ডনে চিকিৎসার ফলে বেঁচে গেলেও সারা জীবনের জন্যে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে। সেই থেকে গত বুধবার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হুইল চেয়ারে বসেই দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করতেন বেগম চৌধুরী।

গত ১২ই ডিসেম্বর, বুধবার হঠাৎ করে হৃদরোগে  আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গেই  কেন্দ্রীয় লন্ডনের ইউস্টোনে ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালে  সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে ভর্তি করা হয়। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবণতি ঘটলে হাসপাতালে ভর্তির ১দিন পর থেকেই আইসিইউতে তাকে লাইফ সাপোর্টের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়। দীর্ঘ এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার পর গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় ডাক্তাররা তাঁর লাইফ সাপোর্ট মেশিন খুলে ফেলেন, এবং যে কোন সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন বলে জানিয়ে দেন।

লাইফ সাপোর্ট মেশিন খোলার খবর পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা, লন্ডন সফররত পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি, আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজারুল কায়েস ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফসহ অন্যান্যরা।লাইফ সাপোর্ট মেশিন খোলার ৫ ঘন্টা ২০ মিনিট পর সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বেগম চৌধুরী।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে  খ্যাতিমান সাংবাদিক জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর ছিল দীর্ঘ ৫৬ বছরের দাম্পত্য জীবন। সুখ-দুঃখের এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটলো মঙ্গলবার লন্ডন সময় রাত ১০.৫০ মিনিটে, স্ত্রীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম চরিত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হয়ে গেলেন নিঃসঙ্গ। স্ত্রী বিয়োগে কাতর জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সাথে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো কথা বলা সম্ভব হয়নি। শোক বিহবল জনাব চৌধুরী হয়তো দীর্ঘ ৫৬ বছরের দাম্পত্য জীবনের স্মৃতিগুলোই এখন নিরবে খুজে ফিরছেন।

শুক্রবার  জানাজা, লাশ দেশে যাচ্ছে
এদিকে, আগামী শুক্রবার বাদ জুমা পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর নামাজে জানাজার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ জানাজার বিষয়টি তদারকি করছেন। জানাজা শেষে শনিবার বিমানের ফ্লাইটে মরহুমার মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। মরদেহের সঙ্গে দেশে যাচ্ছেন মরহুমার স্বামী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবি বা বনানী গুরুস্তানে প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে শহীদ বুদ্ধিজীবি গুরুস্তানে দাফনের পরামর্শ দিলেও গাফ্ফার চৌধুরী স্ত্রীর পাশে নিজেও শেষ শয্যা গ্রহনের ইচ্ছে প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌছা যায়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবি গুরুস্তানে পাশাপাশি দুটো কবরের জায়গা পাওয়া গেলে প্রয়াত সেলিমা আফরোজ চৌধুরীকে সেখানেই দাফন করা হবে, আর তা পাওয়া না গেলে বেগম চৌধুরীকে দাফন করা হবে বনানী গুরুস্তানে। যেটির পাশেই থাকবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর শেষ শয্যার জন্যে আরেকটি কবরের জায়গা।

 

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর