অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার মজুদ ১২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন (এক হাজার ২৪০ কোটি) ডলারে পৌঁছেছে।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর রিজার্ভ সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার জমা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে।
মঙ্গলবার নতুন রেকর্ড হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমান বলেন, চলতি সপ্তাহেই রিজার্ভ ১২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবারের মধ্যে এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) তিন প্রকল্পের ১৫০ মিলিয়ন ডলার যোগ হবে। রেমিটেন্স প্রবাহও ভাল। আমরা আশা করছি, এ সপ্তাহেই রিজার্ভ ১২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।”
তিনি জানান, সোমবার রিজার্ভে ছিল ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মঙ্গলবার এডিবির ৭০ মিলিয়ন ডলার এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ৪০ মিলিয়ন ডলার যোগ হওয়ার পর তা বেড়ে ১২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
এদিকে রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কেনা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবারও কেনা হয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার প্রবাহ বাড়ায় টাকার বিপরীতে ডলারের দরও ক্রমাগত কমছে। মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময়ে পাওয়া গেছে ৮০ টাকা ২৫ পয়সা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রার বিনিময় হার প্রায় ৮৫ টাকায় উঠেছিল।
রেমিটেন্স, রপ্তানি আয় ও বিদেশি সহায়তা বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে বলে জানান সাইদুর রহমান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ১২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।
এরপর ১০ ডিসেম্বর তা আবার ১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
বর্তমানের মজুদ ডলার দিয়ে প্রায় পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে সাইদুর রহমান জানান।
জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বর্ধিত ঋণ সুবিধার দ্বিতীয় কিস্তিতে ১৪ কোটি ১০ লাখ ডলার যোগ হলে রিজার্ভ আরও বাড়বে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৬১২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহেই (১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) এসেছে ৬২ কোটি ডলার।
কোরবানীর ঈদ ও পুজা সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠানোয় অক্টোবর মাসে ১৪৫ কোটি ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় দেশে আসে।
এর আগে এক মাসে এতো বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
আর জুলাই-অক্টোবর সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অথচ গত বছরের একই সময়ে এই ব্যয় ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছিল।
আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ বেড়েছে ১৭৫ শতাংশ।