মোশাররফ ওএসডি

মোশাররফ ওএসডি

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার পর ওএসডি করা হয়েছে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে।

দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত মেনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল এই সচিবকে।

তার আগে সেতু বিভাগ থেকে সরিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে বদলি করা হয়েছিল।

এখন ওই পদ থেকে তাকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার মোশাররফকে ওএসডি করার এই আদেশ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তা মঙ্গলবার প্রকাশ হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সোমবারই মোশাররফসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে।

এতে পদ্মা প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য অর্থ লেনদেনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

মোশাররফ অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় অংশ নেননি বলেও দাবি করেন তিনি।

২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিশ্ব ব্যাংক তাদের ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় তারা ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বদলালেও দুর্নীতি তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত পর্যবেক্ষণে একটি প্যানেল গঠন করে।

দুদকের সঙ্গে ওই পর্যবেক্ষক দলের দুইর দফা আলোচনার পর বিশ্ব ব্যাংক জানায়, মামলা না করলে তারা অর্থ ছাড় করবে না।

এরপরই সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি জানিয়ে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সিাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে আসামি করেনি দুদক, যদিও এজহারে বর্ণনায় তাদের নাম রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন কয়েক দফায় মূল্যায়ন কমিটিতে পরিবর্তন আনেন।

তাই তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে বলে সোমবার মামলা দায়েরের সময় জানান দুদকের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য সেতু বিভাগ পর্যায়ক্রমে মোট চারটি কমিটি গঠন করেছিল।

জাহিদ বলেন, “বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কমিটি যখন কাজ গুছিয়ে রিপোর্ট প্রদানের অবস্থায় গিয়েছে, তখনি সেতু সচিব নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই হয় সেই কমিটি ভেঙে দিয়েছেন, কিংবা পুনর্গঠন করেছেন নয়ত নতুন কমিটি করেছেন।”

“কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই বারবার কমিটি ভাঙা এবং পুনর্গঠন আমাদের কাছে সবচেয়ে সন্দেহজনক মনে হয়েছে,” বলেন তিনি।

দুদকের এজহার অনুযায়ী, ২০১০ এর ১৮ জানুয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে সেতু বিভাগ। সেই কমিটি মোট ১৩টি কোম্পানির প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের পর পাঁচটি কোম্পানীর সংক্ষিপ্ত তালিকা করে।

ওই কোম্পানিগুলো হল- ওরিয়েন্টাল লি. (জাপান), হালক্রো (যুক্তরাষ্ট্র), এ্যাকম ইন্টারন্যাশনাল (নিউজিল্যান্ড), হাই পয়েন্ট রেন্টাল (ইউকে) ও এসএনসি লাভালিন(কানাডা)।

কিন্তু এই কমিটি বিলুপ্ত না করেই একই বছরের ৩ মে দ্বিতীয় কমিটি প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু কোনো কারণ না দেখিয়েই সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে ৭ জুন তৃতীয় আরেকটি কমিটি গঠন করে সেতু বিভাগ। তবে সেই কমিটির প্রধান মো. সেকান্দার আলী দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানালে কাজ শুরুর আগেই ওই কমিটি ভেঙে যায়।

এরপর মোশাররফ হোসেন ভুইয়া নিজেকে আহ্বায়ক এবং সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউসকে সদস্যসচিব করে ২০১০ এর ২৩ জুন ৭ সদস্য বিশিষ্ট চতুর্থ কমিটি গঠন করেন।

বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্তুত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বিধান থাকলেও চতুর্থ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা জাহিদ।

তিনি বলেন, মোশাররফ হোসেন ভুইয়া প্রথমে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টালের পক্ষে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তুতি নিলেও কমিটির সদস্য সচিব ফেরদাউস এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে ই-মেইল যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন।

“মোশাররফ হোসেন ও ফেরদাউস প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন। ফেরদৌস টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এসএনসি লাভালিনকে গোপনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করেছেন।”

দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, ঘুষ লেনদেনের একটি ষড়যন্ত্রের প্রমাণ তারা পেয়েছে। তবে লেনদেন হয়নি।

কাজ দেয়ারি বিনিময়ে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেনের আলোচনা হয়েছিল, তা স্পষ্ট জানতে পারেনি দুদকের অনুসন্ধান দল।

জাহিদ বলেন, “আমরা এখনো রমেশের সেই কথিত ডায়েরিটি হাতে পাইনি। রমেশ, ইসমাইল এবং কেভিন ওয়ালেসের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সম্ভব হয়নি। তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পূর্ণ হলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।”

লাভালিন কর্মকর্তা রমেশ শাহ ও মো. ইসমাইলের বিরুদ্ধে কানাডা পুলিশ ঘুষ সাধার অভিযোগ তদন্ত শুরু করলে পদ্মা প্রকল্পে দুর্নীতি প্রকাশ্য হয়। রমেশ ও ইসমাইলকে গ্রেপ্তারের সময় রমেশের ডায়েরিটি জব্দ করা হয়, তাতে বাংলাদেশের কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়।

তবে কাদের কাদের নাম ওই ডায়েরিতে রয়েছে, তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ শীর্ষ খবর