জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী তেলের দাম বাড়ানোর কথা বললে কয়েকজন মন্ত্রী এর বিরোধিতা করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের বৈঠকে বসে এ বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও জ্বালানি উপদেষ্টা। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সূত্রমতে, বৈঠকে সংসদের আগামী বছরের প্রথম অধিবেশনের রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
তেলের দাম: বৈঠক সূত্র জানায়, জ্বালানি উপদেষ্টা তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব উত্থাপন করলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানকসহ বৈঠকের কয়েকজন সদস্য এ প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেন।
একাধিক মন্ত্রী প্রথম আলোকে জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রভাব যোগাযোগ, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর পড়ে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাম বাড়ানোর আগে এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন না। কিন্তু জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লে জনগণ মন্ত্রী ও সরকারকে গালি দেয়।
একজন মন্ত্রী বলেন, ‘আমি জ্বালানি উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনারা প্রত্যেক বার তেলের দাম বাড়ান, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন না। ভুক্তভোগী তো আমরা। তেলের দাম বাড়লেই বাস, লঞ্চভাড়াসহ জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি বিভাগ ১০ ডিসেম্বর তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু তাঁরা বাড়াতে দেননি। গতকাল আবারও এ বিষয়টি আলোচনায় তোলা হয়েছে।
তবে আরেকজন মন্ত্রী বলেন, এটাও ঠিক, তেলের দাম বাড়ানোর জন্য দাতাদের চাপ আছে। তবে নির্বাচন সামনে, তাই মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্যই দাম না বাড়ানোর পক্ষে।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, আগামী বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়ায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তথ্য সংযোজন ও পরিমার্জন করা হবে। নতুন বছরের শুরুতে সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণ দেবেন। রীতি অনুযায়ী, সরকারের চার বছরের কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। এর আগে ৩ ডিসেম্বর খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়। ওই সময় মন্ত্রিসভা কিছু পর্যবেক্ষণসহ খসড়াটি সংশোধনের পরামর্শ দেয়। তবে সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যের জন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, খসড়াটি চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ভাষণের খসড়াটি রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করবেন। তবে এতে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছামতো কিছু তথ্য সংযোজন ও বিয়োজনের সুযোগ থাকবে।