জামায়াতে ইসলামীসহ সব ‘সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল’ নিষিদ্ধ করা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত শেষ করাসহ কয়েকটি দাবিতে সারা দেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে।
প্রায় একই দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে হরতাল করছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাও।
সিপিবি ও বাসদ কর্মীদের ভোর থেকেই দলীয় ও জাতীয় পতাকা নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করতে দেখা যায়।
৬টার দিকে পুরানা পল্টন সিপিবি কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং তোপখানা রোড বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দুটি মিছিল বের হয়। কাছাকাছি সময়ে বাসদের একটি মিছিলওর পল্টন, দৈনিক বাংলা, প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে প্রগতিশীল ছাত্রজোট কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী গান, সমাবেশ ও খণ্ড মিছিল করছে। পল্টন থেকে প্রেসক্লব হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত পুরো এলাকা রয়েছে সিপিবি ও বাসদ কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। হরতালের সমর্থনে মিছিল হয়েছে পুরান ঢাকা ও মিরপুর এলাকাতেও।
সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ দেখা গেলেও কোথাও কোনো গোলোযোগের খবর পাওয়া যায়নি। হরতালের প্রথমভাগে সড়কে বাস চলাচল ছিল একেবারেই কম। তবে অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। পল্টন, রূপসীবাংলা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশকে যানবাহন অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
হরতালের আগের দিন সোমবার পুরানা পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বলেন, “আমরা দেশবাসীর কাছে ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা হাতে রাজপথে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা ও জামায়াতের সহিংস সন্ত্রাসের জবাব দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবাইকে এই হরতালের পক্ষে রাজপথে থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান আমিরসহ নয় শীর্ষ নেতা ও বিএনপির দুই নেতার বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
গ্রেপ্তার শীর্ষ নেতাদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামী গত ৪ ডিসেম্বর সারা দেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল করে। একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে গত প্রায় দেড়মাস ধরে দেশে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে তারা। আইনমন্ত্রীর গাড়িও তাদের হামলার শিকার হয়েছে।
জাফর আহমদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কেবল রাজাকাররাই আগামীকালের হরতালে গাড়ি নামাতে ও দোকান খুলতে চেষ্টা করতে পারে। জাতীয় ইস্যুতে ডাকা এই হরতালের সপক্ষে না থেকে পারে না স্বাধীনতাপ্রিয় দেশবাসী।”
সহিংসতার পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মধ্য দিয়ে বামপন্থী দলগুলো হরতাল করবে জানিয়ে সিপিবি ও বাসদ নেতারা বলেন, বুর্জোয় রাজনৈতিক দলগুলো সহিংস নৈরাজ্য ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে হরতালের মতো গণসংগ্রামের একটি কার্যকর হাতিয়ার সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে মানুষের সক্রিয় সমর্থনের ভিত্তিতে হরতাল কর্মসূচি সফল করতে হবে।
সিপিবি ও বাসদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করা, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী মালিক পক্ষ ও সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দেয়া, গার্মেন্টসহ সব শিল্প-কারখানায় আইন অনুযায়ী কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা এবং বিদ্যুৎ বিল, গাড়ি ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো ও বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, আন্তঃজেলা যানবাহন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন, সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন সমিতি, ঢাকা জেলা বাস-ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা বামপন্থীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।
সোমবার গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাও তোপখানা রোডে সংবাদ সম্মেলন করে হরতাল সফল করার আহ্বান জানায়।
তাদের দাবির মধ্যে আছে- জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা প্রত্যাহার ও বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বন্ধ, শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সব মালিক ও কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করে সব কারখানায় নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা, যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও রেল এবং গাড়ি ভাড়া কমানো, দুর্নীতি বন্ধ করে লোপাট করা অর্থ উদ্ধার, সম্পদ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিচার নিশ্চিত করা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ, রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প বাতিল ও এশিয়া এনার্জিকে বহিষ্কার করে ফুলবাড়ি চুক্তি বাস্তবায়ন।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।