সিলেট থেকে: সিলেটে ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন বাবরুল হোসেন বাবুল। প্রতিবারই নির্বাচন এলে আলোচনায় আসেন তিনি। নির্বাচনে প্রার্থী হন। এরপর আবার চলে যান অন্তরালে। এবার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে জাতীয় পার্টিতে চলছে তোলপাড়। পার্টির নেতারা বাবুলকে সহজে মেনে না নেয়ায় এবার সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছেন তিনি। মনে হচ্ছে, এবার বেশ কাঠখড় পুড়িয়েই তাকে রাজনীতির মাঠে ফিরতে হবে। বাবরুল হোসেন বাবুল সিলেটের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান। একবার নির্বাচনে খেলা দিয়ে তিনি আকর্ষণ কুড়িয়েছিলেন সবখানে। এ কারণেই সিলেটের রাজনীতির মাঠে তিনি সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নাম। গত মেয়র নির্বাচনের ভরাডুবির পর অন্তরালেই চলে গিয়েছিলেন। সিলেট শহর ছেড়ে প্রকৃতি রাজ্য জাফলংয়ের কাছাকাছি নলছুড়ি এলাকায় জৈন্তা হিল রিসোর্ট নির্মাণ করেন। ওখানে তিনি চাঁদনি রাতের সাদা ঝরনার গল্প শোনাতেন সবাইকে। শেষমেষ তার গল্পের ফাঁদে পড়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কাজী জাফর আহমদ। গত মাসে এরশাদ যখন সিলেটের এসেছিলেন তখন তার সঙ্গে সিলেটে এসেছিলেন কাজী জাফর। এরশাদ চলে যাওয়ার পর তাকে অনেকটা জোর করেই জাফলং নিয়ে যান বাবুল। এরপর থেকে বাবুল সিলেটের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আলোচিত হতে থাকেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন তিনি এরশাদকে চিরকুট লিখে। সিলেট সার্কিট হাউজে এরশাদ যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তার আগেই বাবুলের চিরকুট এরশাদের হাতে তুলে দেয়া হয় এবং এই চিরকুটে তিনি এরশাদকে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এরশাদের নির্বাচনের সমন্বয়ক হিসেবে তিনি কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এরপর থেকে বাবুল সিলেটের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে এরশাদের নির্বাচন বিষয়ক উপদেষ্টা বলে পরিচিতি পেয়েছেন। সমপ্রতি এক সাক্ষাৎকারে বাবুল জানিয়েছেন, সিলেট বিভাগে এরশাদের উপদেষ্টা হিসেবে জনমত গঠন ও জনসভা করাই আমার মূল দায়িত্ব। মূলত এরশাদের শাসনামলের উন্নয়ন মানুষকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়াই আমার লক্ষ্য। সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ তাকে মৌখিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, হাসিনা-খালেদার দ্বিমুখী দ্বন্দ্বে দেশ নিশ্চিতভাবে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিলেটের জনগণকে অবহিত না করলে আমি বিবেকের কাছে দোষী থাকবো। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ভুল সময়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঠিক তেমনি হাসিনা সরকারও ভুল সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ক্ষমতার শেষ সময়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধুর জন্য যেমন বুমেরাং হয়েছিল তেমনি আই-ওয়াশের জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাও শেখ হাসিনার জন্য বিপদ ডেকে আনবে। তার মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ক্ষমতা গ্রহণের শুরু দিকেই করা উচিত ছিল। জনপ্রিয়তা ভাটা পড়ায় আওয়ামী সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার ইস্যুতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।’ বাবরুল হোসেন বাবুল-এর আগে এরশাদের সঙ্গে রাগ করে দল ছেড়ে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ওই সময় আওয়ামী লীগের ছায়াতলে অবস্থান নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভালভাবে সমঝে নিতে পারেনি তাকে। এরপর তিনি এবার নতুন করে জাতীয় পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দলের চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বাবুলের কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা জানান, এরশাদের মন জয় করতে বাবুল আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পার্টির নতুন ধারা সৃষ্টিতে কাজ করছেন। তাদের এ প্র্রক্রিয়া নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা জাতীয় পার্টিতে। এ ক্ষেত্রে এরশাদ কেন্দ্রিক বেশ কিছু আলোচনা দলের ভেতর ও বাইরে চলছে। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় পার্টি বড় দল। এখানে যে কেউ এলে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। দলের চেয়ারম্যানের হয়ে কাজ করলে আমরা কোনভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়াবো না। তবে জাতীয় পার্টির সিলেট মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি এডভোকেট কাজী আশরাফ উদ্দিন সাদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বাবরুল হোসেন বাবুলকে নিয়ে বেশ আলোচনা, বেশ তোলপাড়। তবে, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির কোন নেতাই তাকে মনে-প্রাণে মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, বার বার দলত্যাগী নেতাদের নিয়ে কখনও দলের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে না। এদিকে, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হওয়ার পর শাহপরান গেটে শ্রমিক পার্টি আয়োজিত বাবুলের প্রথম জনসভা নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত উভয় গ্রুপ শক্ত অবস্থান গ্রহণ করায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শেষে আবদুল্লাহ সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপে রাতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল সেখানে সমাবেশে করেন বাবরুল হোসেন বাবুল।
জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের উপদেষ্টা হলেন বাবরুল হোসেন বাবুল: মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার, সিলেট পৌরসভার দু’বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সিলেট সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুলকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম চৌধুরী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। গত ২০শে নভেম্বর থেকে ওই মনোনয়ন কার্যকর করা হয়।