পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে হতাশা!

পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে হতাশা!

পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে কোনো আলোচনা নেই। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এজেন্ডার বাইরে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে; কিন্তু বেশ কিছু দিন পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে না। শুধু মন্ত্রিসভা নয়, অন্য কোনো বৈঠকেও এ নিয়ে কিছু শোনা যাচ্ছে না। কেউ প্রসঙ্গটি তোলেনও না। পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অনিয়ম ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়েরের পর গতকাল সোমবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন নীতি নির্ধারক ইত্তেফাককে এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক গত কিছু দিন ধরে পদ্মা সেতু নিয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে, সম্ভবত এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারের মধ্যে প্রকল্পটির ভবিষ্যত্ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেকেই হয়তো নিরাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা বার বারই পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংককে অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখেছি। তারা প্রথমে তদন্তের কথা বলেছে। তারপর মামলার কথা বলেছে। এরই মধ্যে মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কথাও তারা বলেছে; কিন্তু আমরা যতদূর জানি এ বিষয়ে দুদকের মনোভাব অন্যরকম। মামলাটি আদালতে টিকবে কিনা সে নিয়েও দুদক থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। কারণ দুর্নীতির মামলা চলে প্রমাণাদির ভিত্তিতে; কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে, ‘আদালতে গ্রহণযোগ্য হওয়ার মতো তেমন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। পারিপার্শ্বিক কিছু আলামত রয়েছে। যেমন, বলা হয়েছে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের কাছে যাওয়া আসা করেছেন। এখন এটা দিয়েতো দুর্নীতির মামলা প্রমাণ করা শক্ত। আদালত তো আর সরকারের কথায় চলে না।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের অন্য একজন নীতি নির্ধারক গত সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করতে চায় না বলে অনেক আগে থেকেই আমার মধ্যে একটি সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। আমি এখনো চাই এই সন্দেহ অমূলক বলে প্রমাণিত হোক।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বিতীয় দফা বাংলাদেশ সফরের সময় দুদকের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। বৈঠকের সময় দুদক যে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে তাতে কাকে কাকে অভিযুক্ত করা হবে তা নিয়ে প্যানেল সদস্যদের সঙ্গে দুদকের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। দুদক সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে আইনী ব্যবস্থা নিতে চাইলে তাতে সম্মত হয়নি আন্তর্জাতিক প্যানেল। দুদক সূত্রে জানা যায়, আলোচনার সময় আন্তর্জাতিক প্যানেলের একজন সদস্য আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে দুদকের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, আপনারা তিনজন বিদেশি নাগরিককে অভিযুক্ত করতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশের আইনে তাদের বিচার করাটা কঠিন; কিন্তু আমরা তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাদের কথা বলছি তাদের আইনী ব্যবস্থার আওতায় আনতে চাচ্ছেন না। এভাবে কোনো মামলা হলে সেটিতো ১০০ বছরেও শেষ হবে না। আন্তর্জাতিক প্যানেলে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার কয়েকদিন পর ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন এক বিবৃতিতে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্ব ব্যাংক। এ ধরনের তদন্তে সহায়তার জন্য দুদককে অনেক তথ্য-প্রমাণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

মামলা বিষয়ে বিশ্বব্যাংককে এখনো কিছু জানায়নি দুদক: গোল্ড স্টেইন

এদিকে, বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এলেন গোল্ড স্টেইন বলেছেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে করা মামলা বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিশ্বব্যাংককে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানায়নি। আর মামলা বিষয়ে দুদকের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হাতে পাওয়ার পরই বিশ্বব্যাংক তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে।

গতকাল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে পদ্মা সেতু বিষয়ে বৈঠক করেন এলেন গোল্ড স্টেইন। রাজধানীর শেরে বাংলানগরের ইআরডির সচিবের কার্যালয়ে এ অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পদ্মা সেতুর দুনীতির তদন্ত ও দুদকের করা মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি এসব কথা বলেন। তবে ইআরডি সচিবের সঙ্গে তার কি আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য জেলা সংবাদ বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর