জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি আমিরা হক ঢাকা আসছেন

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি আমিরা হক ঢাকা আসছেন

শান্তিরক্ষা মিশনে প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির উত্তরণ নিয়ে আলোচনায় ঢাকা আসছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি আমিরা হক। মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত থেকে আন্ডার সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ওই কর্মকর্তা এক সপ্তাহের সফরে আসছেন। ৫ থেকে ১২ই জানুয়ারি বাংলাদেশে অবস্থান করবেন তিনি। আলোচনা করবেন সরকার, বিরোধী দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। জাতিসংঘের মহাসচিবের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী ওই কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ কর্মকর্তার সফরকে উভয়ের তরফেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একে আবদুল মোমেন পররাষ্ট্র দপ্তরে এক ই-মেইল বার্তায় আমিরা হকের সফরের বিস্তারিত জানিয়ে প্রেসিডেন্টসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাক্ষাতের সময় চেয়েছেন। কেবল অফিসিয়াল বৈঠক বা আলোচনাই নয়, তার এ সফরে বাংলাদেশ ব্যতিক্রমী কিছু করে দেখাতে পারে কিনা তারও নির্দেশনা চেয়েছেন তিনি। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারি কর্মসূচির সময়ক্ষণ চূড়ান্ত করতে নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ মিশন কাজ করছে। পররাষ্ট্র দপ্তরের ইউএন ডেস্কের এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনের পাঠানো এক ই-মেইল বার্তা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফরওয়ার্ড করে তাদের সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরেও আনুষ্ঠানিকভাবে সময় চাওয়া হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত সফরের তারিখ ছাড়া কোন কিছুই চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান সিনিয়র ওই কূটনীতিক। আলাপচারিতায় ওই কূটনীতিক জানান, শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের আরও প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্ব কিভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে একটি সেশনের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। নাগরিক সমাজের তরফে জাতিসংঘের ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশী প্রথম নারী আমিরা হককে সংবর্ধনা জানানোর আয়োজন হতে পারে। এদিকে জাতিসংঘের ঢাকা মিশন বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জামায়াতের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আন্ডার সেক্রেটারির বৈঠকের সময়ক্ষণ ঠিক করতে কাজ শুরু করছে বলে জানা গেছে। তবে বেসরকারি কোন কর্মসূচিও গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক প্রতিনিধিরা আফ্রিকা মহাদেশের যুদ্ধপীড়িত লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, সুদান, আইভরিকোস্টসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছে। সেইসঙ্গে সে সব দেশে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন তারা। ওই মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব এবং আনুপাতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ দিন ধরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের তরফে দাবিটি আরও জোরালো হয়। ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধানের এ সফরেও তা গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই বিশ্বে বিভিন্ন দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব প্রদানকারী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে আমিরা হকের সফরে। সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সব বৈঠকেই এর তাগিদ থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি মাসেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ দেখতে ঢাকা সফর করেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিভাগের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। পাঁচ দিনের সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর কাছে চিঠিও হন্তান্তর করেন তিনি। সব বৈঠক এবং হস্তান্তর করা চিঠিতে সংঘাতের পথ পরিহার করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে বসা এবং সব দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেয়া হয় জাতিসংঘের তরফে। গত ২৫শে জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত থেকে আন্ডার সেক্রেটারি পদে নিয়োগ পাওয়া আমিরা হক দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে জাতিসংঘে কাজ করছেন। এর মধ্যে তার ১৯ বছর কেটেছে বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের বিশেষ দায়িত্বে। গোলযোগপূর্ণ পূর্ব তিমুরে মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর আন্ডার সেক্রেটারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান তিনি।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ শীর্ষ খবর