এখন পদ্মার কাজ শুরু হবে:মুহিত

এখন পদ্মার কাজ শুরু হবে:মুহিত

দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলার মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর ক্ষেত্রে বাধা অপসারিত হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মামলা হয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে।”

অনুষ্ঠানটি ছিল বিজয় দিবসের। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা পদ্মা সেতু নিয়ে দুদকের মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে মুহিত বলেন, “নো কমেন্ট। দুদককে জিজ্ঞাসা করুন।”

এরপর লিফটের ভেতরে সাংবাদিকদের বার বার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “মামলা হয়েছে। এখন পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হবে।”

এদিন দুপুরেই দুর্নীতি দমন কমিশন সাতজনকে আসামি করে মামলা করে।

মামলার বিষয়ে মুহিত বলেন, “মামলার এজহার পড়ে দেখো, সব বুঝতে পারবে।”

দীর্ঘ টানাপড়েনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর নাম এই তালিকায় নেই।

দুদকের তদন্ত পর্যবেক্ষণে গঠিত বিশ্ব ব্যাংকের প্যানেল এই মাসের শুরুতে আসামিদের বিষয়ে মতানৈক্য নিয়ে ফিরে যায়।

বিশ্ব ব্যাংক প্যানেল ফিরে যাওয়ার ১২ দিন পর দুদকের উপ পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাহিদ বাদি হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে, বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত অনুসারে যাকে আগেই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

বাকি ছয় আসামি হলেন- সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশে কানাডীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এই সংস্থার আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।

এজহারের বরাত দিয়ে বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের তদারকি পরামর্শকের কাজ এর অন্যতম দরদাতা এসএনসি লাভালিন ইন্টারন্যাশনালকে পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা দণ্ডবিধির ১৬১ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

এসএনসি লাভালিন ওই কার্যাদেশ পেলে ‘ঘুষ লেনদেন সম্পন্ন হত’ বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আবুল হোসেন ও আবুল হাসান চৌধুরী প্রসঙ্গে এজাহারে বলা হয়েছে, ঘুষ লেনদেনের ষড়যন্ত্রে তাদের ভূমিকার বিষয়ে অনুসন্ধানে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক। মামলার তদন্তের সময় তাদের বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি লাভালিনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক।

দুদক এরপর তদন্ত শুরু করলেও সরকার এবং তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে অনড় থাকেন। এই প্রেক্ষাপটে গত জুন মাসে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক।

এরপর আবুল হোসেনের পদত্যাগ, প্রকল্পের ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজর ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়াকে ছুটিতে পাঠানোসহ সরকারের নানামুখী তৎপরতায় বিশ্ব ব্যাংক সিদ্ধান্ত বদলায়।

তাদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর লুইস গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্যানেল দুদকের তদন্ত পর্যবেক্ষণে দুই দফা ঢাকা সফর করে।

এই প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করছে বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর অনুসন্ধান পর্যায়ে সৈয়দ আবুল হোসেন, আবুল হাসান, মোশাররফ হোসেনসহ ২৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

অন্যান্য অর্থ বাণিজ্য বাংলাদেশ শীর্ষ খবর