মোদি বনাম গান্ধী

মোদি বনাম গান্ধী

ভারতে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। আলোচনার মূলে রয়েছে একটি প্রশ্ন—কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?
ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চা (ইউপিএ) বহাল থাকলে প্রধানমন্ত্রীর আসনে পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা। সে ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হিসেবে জোটের প্রধান দল কংগ্রেসের তরুণ নেতা রাহুল গান্ধী। ভারতে রাজনীতিতে গান্ধী পরিবারের ঐতিহ্য ও প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অপর দিকে বিরোধী দলীয় জোট এনডিএ ক্ষমতায় গেলে প্রধান শরিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো।
এ কারণে গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনকে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা নেওয়া হয়েছে। ১৭ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা ভোট নেওয়া হবে। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২০ ডিসেম্বর।
বিশ্লেষকদের মতে, এ নির্বাচনে কংগ্রেস বা বিজেপি, যে দল জয়ী হবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই ফলাফল ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অনেকে এই নির্বাচনকে মোদি বনাম গান্ধী হিসেবে দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন একটি রাজনীতির পালাবদলের পটভূমি হতে পারে। চতুর্থবারের মতো রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করছে অনেকে। তা যদি সত্য হয়, তবে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য দল থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদিকেই মনোনয়ন দিতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এদিকে কংগ্রেস এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা যদি তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়, তবে তাদের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন রাহুল গান্ধী।
ভারতে এর মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, গুজরাটের নির্বাচন হবে আসলে নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে বিশ্লেষকেরা সতর্কছেন, এরা দুজনই যে প্রধানমন্ত্রী পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন, এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২ আসনের ৮৭টিতে গতকাল ভোট হয়েছে। রাজ্যের এক কোটি ৮১ লাখ ভোটার ৮৪৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে ভোট দিয়েছেন। সুরাট উপকূলীয় সাতটি জেলার ৪৮টি আসন, দক্ষিণ গুজরাটের পাঁচটি জেলার ৩৫টি ও আহমেদাবাদ জেলার চারটি আসনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৬৮ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে মোদি বা রাহুল—কারও প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার নিশ্চয়তা নেই। অনেক ভারতীয় মনে করছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে কারিশম্যাটিক অথচ বিতর্কিত মোদি এবং গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুলের মুখোমুখি লড়াই জমে উঠবে। তাঁদের মধ্যে যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সংকটজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। লাখ লাখ লোককে দারিদ্য সীমার নিচ থেকে তুলে আনা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেশকে দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জও নিতে হবে তাঁকে।
গুজরাটের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোট শুরু হবে ১৭ ডিসেম্বর। ফলাফল প্রকাশিত হবে ২০ ডিসেম্বর। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হবে ২০ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে মোদির জয়ের ওপরই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে তাঁর পার্টি প্রধান হিসেবে টিকে থাকার ব্যাপারটি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। মিত্র দলগুলোর অনক নেতা ৬২ বছর বয়সী মোদিকে বিতর্কিত করছেন। এরপরও গুজরাটের নির্বাচনে তাঁর বিজয় হবে কংগ্রেসের জন্য অশনি-সংকেত। তাঁদের অভিযোগ, ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গায় এক থেকে দুই হাজার লোক নিহত হলেও ওই সময় দাঙ্গা নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি মোদি। তাঁর সমর্থকেরা মনে করছেন, ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত মোদির মন্ত্রিসভার একজন সদস্য বলেন, এক দশকের বেশি সময় ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন মোদি। কিন্তু সরকার পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই রাহুলের। তবে তাঁর পারিবারিক ঐতিহ্য ও নেতা হিসেবে চালানো কর্মকাণ্ড।
‘ডেকোডিং রাহুল গান্ধী’ বইয়ের লেখক আরতি রামাচন্দ্রন বলেন, আগামী নির্বাচনে মোদি ও গান্ধী দুই দলের প্রার্থী হলেও কংগ্রেস চাইবে নির্বাচনী লড়াইটা যেন ব্যক্তিত্বের লড়াই না হয়। কারণ রাহুল গান্ধী এখনো জনসংযোগ ও দলের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশায় মোদির চেয়ে বেশ পিছিয়ে। তিনি বলেন, মোদিকে অনেকে বাকসর্বস্ব বললেও দীর্ঘ দিন রাজ্য চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। সেখানে রাহুল কতটা টক্কর দিতে পারবেন, তা দেখার বিষয়।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক