রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে ছয় মাসের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক লাখের বেশি লোক গৃহহীন হয়েছে। বংশপরম্পরায় এই দুই গোষ্ঠীর মানুষ সেখানে বসবাস করে এলেও দাঙ্গার কবলে পড়ে এখন তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন।
ওই রাজ্যের রাজধানী সিতউইয়ের সড়কগুলোয় বসানো হয়েছে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা। বাড়িঘর হারিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেওয়া রোহিঙ্গাদের কাছে যাতে বিদেশি ত্রাণ পৌঁছতে না পারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। দাঙ্গায় হাজার হাজার রাখাইনের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
সিতউইয়ের দক্ষিণে মেবন উপত্যকার উদ্বাস্তু শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিয়ে থাকা দুই জনগোষ্ঠীর লোকের জীবনযাত্রার মানে যে বিরাট ব্যবধান, তা পরিষ্কার। এখানে এক কিলোমিটার বা তারও কম দূরত্বের মধ্যে সম্পূর্ণ পৃথক আশ্রয় শিবিরে রয়েছে তারা। একটি শিবিরে সৌদি আরবের লোগো-সংবলিত ৩৫টি তাঁবু টাঙানো রয়েছে। তাতে থাকছে ৪০০ রাখাইন বৌদ্ধ। ফু মা গাই তাদেরই একজন। তিনি বলছিলেন, ‘সরকার আমাদের দেখভাল করছে। চাহিদামতো এখানে আমরা খাবার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সব সামগ্রীই পাচ্ছি।’
এই প্রতিবেদন তৈরিকারী বিবিসির সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার বলেন, তিনি এ শিবিরে ওষুধপত্রে ভরা টেবিল ও বেশ কিছু চালের বস্তা দেখেছেন। উপত্যকার অপর আশ্রয় শিবিরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এখানে রয়েছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। শিবিরটিতে যাওয়ার পথে দেখা মিলবে কিছু বাড়িঘরের শেষচিহ্ন। আগে এখানে থাকা রোহিঙ্গাদের বসতি ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শিবিরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা খিন লা মে বলেন, ‘রাখাইনরা আমাদের দিকে ছুরি নিয়ে তেড়ে এসেছিল। তারা আমাদের পাথর ও অন্য ধারলো অস্ত্র দিয়ে মেরেছে।’ আক্রমণ থেকে বাঁচাতে খিন লা আরও চার হাজার রোহিঙ্গার মতোই পালিয়ে শহরের ধারে এই শিবিরে এসে আশ্রয় নেন। শিবিরটি নোংরা, স্যাঁতসেঁতে ও কাদায় ভরা। খোলা নর্দমা দিয়ে পয়োনিষ্কাশনের ময়লা-আবর্জনা গড়াচ্ছে। তাঁবুগুলোও জরাজীর্ণ। এর ভেতর বিক্ষিপ্ত শুয়ে-বসে রয়েছে ক্ষুধার্ত লোকজন।
সংবাদদাতা জোনাহ ফিশার বলেন, ত্রাণকর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের শিবিরটিতে ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জেটি নিয়ন্ত্রণকারী রাখাইনরা ক্রমাগত বাধা দেয়। বিবিসি।

 

অন্যান্য আন্তর্জাতিক ইসলামী জগত শীর্ষ খবর