বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দেশকে ‘গৃহযুদ্ধের দিকে’ নিয়ে ‘একাত্তরের মতো যুদ্ধ বাঁধানোর’ পরিকল্পনা করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “বিএনপি-জামায়াত হরতালের নামে চোরাগুপ্তা হামলা চালাচ্ছে। তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে। পরিকল্পনা চলছে একাত্তরের মতো যুদ্ধ বাধানোর।”
শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের আগে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদারদের সহায়তায় ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু প্রগতিশীল বাঙালিকে হত্যা করে। ঢাকায় এই বুদ্ধিজীবীদের লাশ রায়েরবাজার ইটের ভাটার কাছে ফেলে রাখা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘রায়েরবাজার বধ্যভূমি’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
বলা হয়, পরাজয় নিশ্চিত জেনে স্বাধীন বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্যেই পাকিস্তানি বাহিনী এ কাজটি করে, যাতে স্বাধীনতা পেলেও একটি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গড়ে উঠতে না পারে।
শ্রদ্ধা জানানেরা পর সৈয়দ আশরাফ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, বিএনপি এবং জামায়াত যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে তারা শক্তি সংগ্রহ করছে।”
তবে তাদের ওই পরিকল্পনা সফল হতে দেয়া হবে না মন্তব্য তিনি বলেন, “আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না।”
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া কেন বিলম্বিত হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে বলেই বিলম্ব হচ্ছে।
“জিয়াউর রহমানের আমলের মতো ক্যাঙ্গারু কোর্ট হলে এতোদিনে বিচার হয়ে যেত।”
চলতি ডিসেম্বর মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার রায় আসতে পারে বলে সৈয়দ আশরাফ জানান।
অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল হক হানিফ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতেই রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হয়। সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্মৃতিসৌধ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও নানা বয়সী মানুষ শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এই স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমরা প্রতিবছরই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে আসছি। তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতেই আজ এখানে মানুষের ঢল নেমেছে।”