বাংলার বিজয়ের ঊষালগ্নে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে দেশবাসী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৮টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেই প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর পর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ।
এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আবারো ফুল দেন শেখ হাসিনা।
শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান। প্রধানমন্ত্রী তাদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর পরই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
এরপর স্মৃতিসৌধ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয়। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জনতার ঢল নামে।বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ শহীদ বেদীতে দিয়ে যায় শ্রদ্ধার ফুল।
সকাল থেকে মানুষের ঢল নামে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও। সকালে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফুল দেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,“দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আমরা প্রতিবছর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে আসছি।তবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতেই আজ এখানে মানুষের ঢল নেমেছে।”
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এই হত্যাকণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।
পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
বলা হয়, পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী এ কাজটি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পুনর্গঠন বাধাগ্রস্ত করা।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শ্রদ্ধায় শহীদ সন্তানদের স্মরণ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, জাতির সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীরা দেশের বিভিন্ন সঙ্কটে জাতিকে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়ে কাণ্ডারীর ভূমিকা পালন করেন। তাদের সৃজনশীলতা ও অসা¤প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা আমাদেরকে দৃপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন প্রজন্ম একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করা।
“স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। সা¤প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়। খুন-হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায়। তাদের এ অপকর্ম আজো থেমে নেই।”
চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা তুলে ধরে তা বানচালে যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করছে। এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।