অটিস্টিকদের স্বীকৃতি জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সায়

অটিস্টিকদের স্বীকৃতি জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সায়

অটিজমকে অন্য রোগের মতো স্বীকৃতি দান এবং আক্রান্তদের সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিতে জাতিসংঘে আনা বাংলাদেশের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে।

জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনে ‘অটিজম আক্রান্ত শিশু ও তার পরিবারের জন্য আর্থ-সামাজিক সহায়তা’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়।

১২ ডিসেম্বরের অধিবেশনে আনুষ্ঠানিক সায় পায় বাংলাদেশের এই প্রস্তাব, যার ফলে এখন শারীরিক-মানসিক প্রতিবন্ধীদের অবহেলা না করে তাদের সহানুভূতির সঙ্গে সহযোগিতা করা এবং প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর অন্তর্নিহিত প্রতিভা বিকাশের পরিবেশ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

অটিজম মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা, যা শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে থাকে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ৮৮ জনের একজন এবং সারাবিশ্বে মোট ৭০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৭ কোটি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত। তবে এতে আক্রান্তদের সহায়তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএইচও) আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে কোনো ধরনের সহায়তা আসেনি।

বাংলাদেশের উত্থাপিত এ প্রস্তাব সমন্বয়ের কাজ করেছেন মিশনের কাউন্সেলর ড. তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই প্রস্তাব পাসের কারণে জাতিসংঘ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখন অটিজম রোগীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে। একই সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। এছাড়া দেয়া হবে চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।

অটিস্টিকদের তথ্য সংগ্রহে প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোররাতে বাংলাদেশ মিশনের এক অনুষ্ঠানে প্রস্তাব পাশে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে শেখ সায়মা হোসেন পুতুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।

অবশ্য শারীরিক অসুস্থতার জন্য সায়মা হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন বলেন, “অটিজম যে একটি মারাত্মক রোগ এ স্বীকৃতি ছিল না এতদিন। এজন্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন বাজেট ছিল না, একইভাবে রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় বাজেটেও এ খাতটি ছিল না। এখন থেকে অটিজমকে মূলধারার একটি রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং এ রোগ নিরাময়ে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।”

প্রস্তাবে গরিব দেশগুলোর অটিজম চিকিৎসা খাতে ধনী দেশগুলোর অর্থ প্রদানের তাগিদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, অটিজম এমন একটি ব্যাধি যা দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে। ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাত্র চার বছরে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইও-এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মানুষ অটিজমের মতো প্রতিবন্ধিতার শিকার।

অনুষ্ঠানের শেষে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করতে ভূমিকা পালনের জন্যে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন এবং কাউন্সেলর ড. তৌহিদুল ইসলামকে ক্রেস্ট প্রদান করেন অটিজম আন্দোলনের সূচনা সংগঠন ‘অটিজম স্পিকস’ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (সায়েন্টিফিক এফেয়ার্স) ড. এন্ডি শিহ।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ শীর্ষ খবর