আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, নিন্দুকের মুখে কালো ছাই দিয়ে বলতে চাই, আমার নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। সার্টিফিকেটেও আছে জাহাঙ্গীর হোসেন। শপথ নেয়ার পরে জাস্টিস জাহাঙ্গীর হোসেন। অন্য কোন কিছু আমার নাম নয়। সৎ ছিলাম, সৎ আছি, বাকি জীবনেও সৎ থাকবো। গতকাল দুপুরে তিনি এসব মন্তব্য করেন। স্পষ্টত ব্রাসেলসে বসবাসকারী আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হকের স্কাইপ কথোপকথন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ব্যাপারেই তিনি এ মন্তব্য করেছেন। যে কথোপকথনে বিচারপতি মো. নিজামুল হক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একইসঙ্গে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নামও বিকৃত করেন তিনি। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন গতকাল যখন এসব মন্তব্য করেন তখন বিচারপতি মো. নিজামুল হক ট্রাইব্যুনালে ছিলেন না। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে তারা এজলাসে আসেন। এসময় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী কোথায়? তিনিই তো ‘আমার দেশ’-এর বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। তার কাছে আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। তখন অন্য প্রসিকিউটররা জানান, তিনি অসুস্থ। তখন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি জানতে পেরেছি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানও অসুস্থ। আজ আমার দেশ-এর ব্যাপারে আদেশ দেয়ার দিন ধার্য আছে। এ সময় প্রসিকিউটর আলতাফ উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে বলেন, আজও ‘আমার দেশ’ এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এসময় জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পত্রিকার কাজই তো লেখার। এরপর তিনি বলেন, প্রকাশিত সংবাদে আমার সম্পর্কেও কিছু কথাবার্তা আছে। এটা নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। তবে আমার দেশ পত্রিকা পড়ে মনে হলো, আমার সম্পর্কে কারও স্পষ্ট ধারণা নেই। কারও সম্পর্কে কোন কিছু বলা বা লিখার আগে, তার সম্পর্কে জেনেই বলা বা লেখা উচিত। এটা ইসলাম ধর্মেও বলা আছে। কিন্তু আজকাল জ্ঞানী ব্যক্তিরা এই নিষিদ্ধ কাজটি করতে পছন্দ করেন। এটা একটা কালচারে পরিণত হয়েছে। তবে ব্যক্তিগত জীবনে আমি যতটুকু এসেছি, সে আসার পথ মসৃণ ছিল না। কঠিন সংগ্রাম করে আমি এখানে এসেছি। এখন বুঝতে পেরেছি, বাকি জীবনটাও আমাকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। শপথ নেয়ার আগ পর্যন্ত আমি একটা আদর্শ অনুসরণ করতাম। রাজনৈতিকভাবে আমি কখনও কোন ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। ব্যক্তি জীবনে আমি কখনও কোন অসততার আশ্রয় নেইনি। কখনও কারও কাছ থেকে কোন সুযোগ-সুবিধা নেইনি। কিছু সংখ্যক নিন্দুকের একশ’ ভাগ মিথ্যা মন্তব্যে মাঝে মধ্যে বিচলিত হই, কিন্তু হতাশ হই না। মিথ্যাকে হারিয়ে সত্য এক সময় সামনে আসবে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি যখন আইন পেশায় ছিলাম, তখন সাংবাদিকরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তারা আমার মামলাগুলোর সংবাদ খুব গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশন করতেন। এ জন্য আমি অনেকের ঈর্ষার কারণ হতে পারি। হাইকোর্টে একটি মামলায় আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আদেশ দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি ছিলেন নজরুল ইসলাম চৌধুরী। দুদকের একটি মামলায় নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন। তার আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। আমরা মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেছিলাম। রুলও দিয়েছিলাম। আমার মধ্যে যদি ন্যূনতম পক্ষপাতিত্ব থাকতো তাহলে তো আমি ভিন্ন রায় দিতাম। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি ইচ্ছা করলে আমার সম্পর্কে এতবড় শিরোনামটা না দিলেও পারতেন। তবু আমি তাকে ধন্যবাদ দেই। ধন্যবাদ জানাই আমার দেশকে এবং রিপোর্টারকে। অন্য সব সাংবাদিকদেরকেও। তিনি বলেন, আজ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান উপস্থিত নেই। আমার দেশ-এর ব্যাপারে আদেশটি তার দেয়াই ভাল। এ অবস্থায় আমার দেশ-এর ব্যাপারে বৃহস্পতিবার আদেশের দিন রাখা হলো। ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের দেয়া বক্তব্য যেন মিডিয়ায় প্রকাশ না হয়, সেজন্য ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা চান প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ। তবে তার আবেদনে সাড়া দেননি বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আমার তো কিছু বলার নেই। সাংবাদিকরাই ভাল বুঝবেন। আমি একটা প্রতিবাদও দিতে পারছি না।